নন্দন দত্ত, সিউড়ি: মা-মেয়েকে খুন করছিল সাধুবাবা। হাতের পোড়া অংশ সারিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছিল ওই সন্ন্যাসী। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। ফলে টাকা ফেরতের চাপ দিতেই বাড়িতে মা ও মেয়েকে খুন করেছিল সে। সেই অপরাধের ৩ বছর পর সাধুবাবাকে ফাঁসির সাজা শোনালেন রামপুরহাট আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক গুরুদাস বিশ্বাস।
দোষী হরিচরণ দাসের বিরুদ্ধে মল্লারপুরের ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা ডলি মণ্ডল ও রিম্পা মণ্ডলকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বুধবার তাঁকে ফাঁসির সাজা শোনাল আদালত।
২০২০ সালের ১৫ মে মল্লারপুর ফতেপুর গ্রামের বাড়ি থেকে মা-মেয়ের নিথর দেহ উদ্ধার হয়। প্রাথমিকভাবে মা-মেয়ের খুনের অভিযোগের তির ছিল ডলি মণ্ডলের স্বামী মিলন মণ্ডলের দিকে। পরে জানা যায়, দুর্ঘটনায় একমাত্র মেয়ে রিম্পা মণ্ডলের দেহের একাংশ আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সেটি সারানোর জন্য রামপুরহাটের ডাকবাংলো পাড়ার সাধু হরিচরণ দাসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু তার কোনও সুফল পাওয়া যাচ্ছিল না। সে নিয়ে ওই পরিবারের সঙ্গে সাধুর বেশ কিছুদিন ধরে মনোমালিন্য থেকে বচসা চলছিল। প্রায় ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল হরিচরণ দাসকে। ওষুধে ফল না মেলায় টাকা ফেরত চান মিলন মণ্ডল। তখন তাঁর বাড়িতে এসে যাগযজ্ঞ শুরু করেছিল সাধুবাবা। সেই সময় সজনে পাতা সিদ্ধ ও ওষুধ খাইয়ে মিলন মণ্ডলকে অজ্ঞান করে দেয় সে। এরপর দোতলায় ডলি মণ্ডলকে শ্বাসরোধ করে খুন করে। সেই কীর্তি দেখে ফেলায় মেয়ে রিম্পাকেও বলি হতে হয়। এরপর মিলনকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় হরিচরণ। পরে মল্লারপুরের এক আশ্রম থেকে মিলনকে উদ্ধার করে পুলিশ। তখনও তিনি সজ্ঞানে ছিলেন না।
এরপর তদন্ত এগোতেই হরিচরণ দাসের এক সঙ্গিনীকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনজকে হেফাজতে নিয়ে তদন্ত চলছিল। পরে অবশ্য বোঝা যায় খুনের সঙ্গে মিলন বা সাধুবাবার সঙ্গিনীর কোনও যোগ নেই। হরিচরণ দাসের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় খুন ও প্রমাণ লোপাটের ধারায় মামলা করা হয়। এদিন বিচারক তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, এই খুনের সঙ্গে সে যুক্ত কি না। জবাবে সাধুবাবা জানায়, পুলিশ তাকে ফাঁসিয়েছে। পরে বিকেল চারটে নাগাদ হরিচরণ দাসকে ফাঁসিরল সাজা শোনান বিচারক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.