শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: একদিকে স্কুলের ক্লাস। অন্যদিকে, এক ফুট দূরত্বে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের কর্মিসভা। মাইকের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে ক্লাসই বন্ধ করে দিলেন শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের দাসপুরের তাজপুরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্রের কর্মিসভার আয়োজন করেছিল স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। সেই সভায় সূর্যকান্ত মিশ্র ছাড়াও মঞ্চে ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় থেকে শুরু করে সম্পাদকমণ্ডলীর চারজন সদস্য-সহ দাসপুর ও চন্দ্রকোনা, কেশপুরের তিন প্রাক্তন বিধায়ক সুনীল অধিকারী, রামেশ্বর দোলই ও গুরুপদ দত্ত এবং সিপিএমের জেলা ও ব্লক স্তরের তাবড় নেতারা। রীতিমতো মাইক বাজিয়ে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলে সভা। সভা শুরুর আগে আবার মাইকে তারস্বরে বাজছিল গণনাট্য সংঘের গান। স্থানীয় একটি স্কুলের একেবারে গা ঘেঁষে রাস্তা দিয়ে নেতা-কর্মীদের যাতায়াতে গমগম করছিল পরিবেশ। ফলে স্কুলের পঠনপাঠন একেবারে লাটে ওঠার জোগাড়। এক সময় বাধ্য হয়ে ক্লাসই বন্ধ করে দেন শিক্ষকরা।
[ মহুয়া’য় মন মজেছে কৃষ্ণনগরের, প্রথম দিনেই নজরকাড়া প্রচার]
স্কুল শুরু হয় সকাল ১১টায়। তার আগে সাড়ে দশটা থেকে স্কুলে শুরু হয় পড়ুয়া ও শিক্ষকদের আনাগোনা। তার আগেই শুরু হয়ে যায় সিপিএম নেতাদের ভাষণ। ফলে ক্লাস শুরুই করতে পারেননি শিক্ষকরা। রানা তাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুদীপ বেরা বলেন, “আমরা জানতামই না বৃহস্পতিবার এখানে সিপিএমের মিটিং। স্কুলে এসে তো জানতে পারলাম। মাইকের শব্দে আমরা স্কুলের প্রাথমিক কাজ যেমন প্রার্থনা, সাফাই, স্বাস্থ্য পরীক্ষা কোনটাই করতে পারলাম না। এমনকী ক্লাসও করতে পারিনি। কী করে হবে বলুন, একেবারে স্কুলের লাগোয়া একটি গাছে মাইকের চোঙ বাঁধা।” ক্লাসে শিক্ষকরা যেমন ঢুকতে পারলেন না, তেমনই পড়ুয়ারা এই সুযোগে জানালার ধারে বসে হাত নেড়ে নেড়ে সভার দিকে তাকিয়ে হাসি মজায় মশগুল হয়েছিল ওই সময়টায়। বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ রাখতে বাধ্য হন শিক্ষকরা।
স্কুল থেকে মেরেকেটে একশো মিটার দূরে কর্মিসভায় যখন কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোটের গুরুত্ব বোঝাচ্ছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, তখন চরম অস্বস্তিতে বাম মনোভাবাপন্ন শিক্ষকরাই। সিপিএমের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন এবিপিটিএর সোনাখালি জোনের সভাপতি তপন জানা বলেন, “এটা মোটেই ঠিক কাজ হয়নি। স্কুলের গা ঘেঁষে মাঠে স্কুল চলাকালীন সভা আমি সমর্থন করছি না। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ।” পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সোনাখালি চক্রের সভাপতি অনিরূদ্ধ আলম বলেন, “স্কুল চলাকালীন সভা করে সিপিএম তাদের সংস্কৃতি বুঝিয়েছে। আমরা চরম নিন্দা করছি। নির্বাচন কমিশনের এটা দেখা উচিত।”
ছবি: সুকান্ত চক্রবর্তী
[ তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে টুইট যুদ্ধ বাবুলের, ভোটের আবহে সরগরম আসানসোল]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.