বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: বিধানসভা, পুরনিগম ও মহকুমা পরিষদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে ঘর গোছাতে নেমেছিলেন দার্জিলিং লোকসভা আসনের সমতলের নিচুতলার সিপিএম কর্মী-সমর্থকরা। দলের তরফে বিভিন্ন ইস্যুতে ধারাবাহিক আন্দোলন শুরু হয়। লক্ষ্য ছিল লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরে চলে যাওয়া ভোট ফিরিয়ে আনা। নির্বাচন এগিয়ে আসতে কর্মীরা ঘরোয়া বৈঠকে ভিড় জমাতেও শুরু করেন। কিন্তু অলিখিত জোটের শর্ত মেনে বামফ্রন্ট দার্জিলিং লোকসভা আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দিতে পুরো ছবি রাতারাতি পাল্টেছে। জেলা ও ব্লক স্তরের নেতারা কর্মীদের প্রচারের কাজ চালিয়ে যেতে নির্দেশ দিলেও সেই উদ্যোম ধরা দিচ্ছে না।
উলটে কংগ্রেসকে দার্জিলিং আসন ছেড়ে দেওয়া যে মেনে নিতে পারছেন না সেটা কর্মী-সমর্থকদের বড় অংশ দলের অন্দরে জানিয়ে দিতে শুরু করেছেন। দলীয় নেতৃত্ব ওই বিষয়ে মুখ না খুললেও রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে ওই পরিস্থিতিতে নিচুতলার বাম ভোট কি আদতে কংগ্রেস প্রার্থীর দিকে যাবে! নাকি বাম ভোটের বড় অংশ চলে যেতে পারে অন্য শিবিরে! যদিও দার্জিলিং জেলা সিপিএম সম্পাদক সমন পাঠক ওই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “রফার নিয়ম মেনেই আসনটি কংগ্রেসকে ছাড়তে হয়েছে। কেন, কোন পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত সেটা আমরা কর্মীদের বোঝাবো। তাই ধর্ম নিরপেক্ষ জোটেই ভোট হবে।”
যদিও রাজনৈতিক মহলের দাবি, সিপিএম এবং কংগ্রেস দুই দলের একটিও পাহাড়-সমতলে সাংগঠনিক দিক থেকে ভালো জায়গায় নেই। তাদের মতে ২০২২ সালে সবুজ ঝড়ে শিলিগুড়ি পুরনিগম বামেদের হাতছাড়া হতে সমতলের ভোটের সমীকরণ দ্রুত পালটাতে শুরু করে। যদিও ইঙ্গিত মিলেছিল ২০১৯ লোকসভা এবং ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে। লোকসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস ভোট দুরমুশ করে সমতলে এগিয়ে যায় বিজেপি। কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট কমে দাঁড়ায় ৫.১৪ শতাংশ এবং বামেদের ৩.৯৯ শতাংশ। এর পর শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি এবং ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা আসন জিতে নেয় গেরুয়া শিবির। কার্যত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে তরাইয়ের সমতলে বাম ও কংগ্রেসের ঘর ছেড়ে চলে যাওয়া ভোটে গেরুয়া শিবিরের বিপুল উত্থান ঘটে। শিলিগুড়ি শহরে ৫০ শতাংশ ভোট দখল করে নেয় বিজেপি। বাম-কংগ্রেসের ভোট কমে দাঁড়ায় ১৬ শতাংশে। কিন্তু সাংগঠনিক এমন দুর্দশার পরিস্থিতি মেনে নিয়েও মাটিগাড়া এলাকার সিপিএম নেতা-কর্মীদের একাংশ লোকসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না থাকায় রীতিমতো হতাশ।
তারা জানান, লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ সম্ভব নয় সেটা ভালো জানেন। তাই আগামী বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে তাদের লক্ষ্য ছিল যে ভোট ঘর ছাড়া হয়েছে সেটা ফিরিয়ে আনা। কিন্তু সম্ভব হল না। কেন, জোট প্রার্থী তো আছেন? প্রশ্ন শুনে হাসেন দুই নিচুতলার নেতা। তারা বলেন, “আমরা কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার কথা বলব কিন্তু কে কী করবে জানি না।” অদ্ভুত হতাশার সুর ফাঁসিদেওয়া এলাকাতেও। সেখানকার বাম কর্মীদের একান্ত আলোচনায় অদ্ভুত প্রশ্ন ফিরছে, কংগ্রেসকে কেন ভোট দেব? ওরাই তো তলেতলে বিজেপিকে তোল্লাই দিয়ে শিলিগুড়ি বিধানসভা আসন আমাদের হাতছাড়া করেছে! তবে বাম ভোট কোথায় যাবে? আরও অদ্ভুত উত্তর “আমরা জানি না।” দলের অন্দরে খবর পৌঁছতে সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য কর্মীদের মনোবল ফেরানোর চেষ্টায় নেমেছেন। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা সিপিএম নেতা তাপস সরকার বলেন, “শুনেছি বিভিন্ন ধরনের কথা উঠেছে। অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছেন। আমরা ওদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বুঝিয়ে দেব কেন ধর্মনিরপেক্ষ জোটের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া জরুরি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.