ধীমান রায়, কাটোয়া: অঘ্রাণের ঘ্রাণে নতুন গুড়ের টান। আর পৌষ ডাক দিলেই বাংলার মাটি ম ম করা খেজুর গুড়ের গন্ধে। এর প্রস্তুতি পর্ব অবশ্য অনেক লম্বা। মাটির ভাঁড়ে টলটলে রসে চুমুক দিয়ে তা টের পাওয়া যায় না। আমরা বরং রস থেকে গুড় হয়ে ওঠার নেপথ্য ঘটনাবলীতে নজর দিই।
খেজুর গাছের যৌবন আসে সাত থেকে আট বছরে। মাত্র তিনমাসের জন্য পূর্ণযৌবনা গাছ উজাড় করে দেয় তার সবটা সম্পদ। সেসময় তাই তার বাড়তি যত্ন প্রযোজন। এসময়ে গাছের অভিভাবক হয়ে ওঠেন শিউলিরা। আলতো হাতে হাঁসুয়া দিয়ে চেঁছে প্রথমে কিছুটা ছাল তুলে দেন, অর্থাত্ মুড়ো দেন। এরপর সপ্তাহখানেকের বিশ্রাম। দ্বিতীয় দফায় মুড়ো দেওয়ার কাজে আরও যত্নশীল হতে হয় শিউলিদের। তারপর ওই চেঁছে ফেলা অংশে নল সংযুক্ত করে ঝোলানো হয় মাটির হাঁড়ি। সূর্য ডোবার মধ্যে এই কাজ শেষ করতে হয়। রাতভর হাঁড়িতে সঞ্চিত রস আবার সূর্যোদয়ের আগে নামিয়ে নেওয়া হয়। এখানেই মোটের উপর শিউলিদের কাজ শেষ। নতুন গুড় তৈরির গুরুত্বপূর্ণ অংশে শিউলিদের সাহায্য ছাড়া কারিগররা অনন্যোপায়।
এরপর কাঠের জ্বালানিতে ফোটানো, পরিণাম – রসের অবস্থান্তর খেজুরের গুড়। এবছর মাঝ পৌষেই শীত জাঁকিয়ে পড়েছে। ফলে খেজুর গাছ যেমন রসবতী, তেমনই শিউলির আনন্দ। আর গুড়ের কারবারীদের তো, যাকে বলে একেবারে ‘পৌষমাস’। কাটোয়া এলাকা ঘিরে রয়েছে প্রায় ৮ হাজার খেজুর গাছ। শীতের মরসুমে টাকার বিনিময়ে রস বের করার কাজ করে থাকেন শিউলিরা। তবে কাটোয়ার গুড় ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থানীয় শিউলিদের দক্ষতার অভাবে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ থেকে শিউলিদের ডাক দিতে হয়। অতএব বোঝাই যাচ্ছে, শিউলি ছাড়া বাঙালির রসাস্বাদন অসম্ভব।
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.