ধীমান রায়, কাটোয়া: হিংসার আগুনে জ্বলেছে দিল্লি। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে রাজধানী। আর এইসময়েই দিল্লিতে আটকে পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামের মহম্মদ মনিরুল শেখ। কিন্তু বিন্দুমাত্র উদ্বেগ নেই মনিরুলের বাড়িতে। কারণ, মনিরুল ফোনে তাঁর বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁকে দিল্লিতে বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন দিল্লির রাম শর্মা, চিনু শর্মারা। দিল্লির হিন্দুর বাড়িতে সপরিবারে সুরক্ষিত কেতুগ্রামের মনিরুল। তাই হিংসার আগুন জ্বললেও ছেলেকে নিয়ে চিন্তা করছেন না কেতুগ্রামের মোরগ্রামের বাসিন্দা আবদুল মান্নান, ঔষিকা বিবি।
দিল্লিতে নিজের ভাড়া বাড়ি থেকেই ফোনে মহম্মদ মনিরুল শেখ জানান, ‘আমরা ভাল আছি। আমাদের ভাড়া বাড়ির মালিক আমাদের গায়ে আঁচর লাগতে দেননি। আমাদের জন্য কোনও চিন্তা নেই।’ কেতুগ্রাম থানার মোরগ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ মনিরুল শেখ দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে দিল্লিতে রয়েছেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, তাঁর একটি পুতুল তৈরির কারখানা রয়েছে দিল্লিতে। ১২ বছর আগে কেতুগ্রামের কোজলসা গ্রামের মেয়ে জুলেখা খাতুনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে দিল্লি চলে যান। তাঁদের দুই সন্তানও রয়েছে। একজনের বয়স ১০ বছর। ছোট ছেলে ৮ বছরের। মনিরুল জানিয়েছেন, বিগত প্রায় ৬-৭ বছর ধরে দিল্লির মউজপুরে এক ভাড়াবাড়িতে বসবাস করছেন তিনি। রাম শর্মা নামে এক ব্যক্তির চারতলা বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া নিয়ে তিনি থাকেন।
গত একসপ্তাহ ধরে অশান্ত দিল্লি। দেশের রাজধানী শহরে এখনও পর্যন্ত অসংখ্য মানুষের জীবন গিয়েছে। বহুমানুষ ঘরছাড়া। মনিরুল জানিয়েছেন, তাদের ফ্ল্যাটের পাশাপাশি যে সব ফ্ল্যাটে মুসলিম পরিবার ছিল তারাও অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে এখনও নিজের ভাড়াঘরেই রয়েছেন তিনি। মনিরুলের কথায়, ‘’আমার ফ্ল্যাটের মালিক আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন নিশ্চিন্তে থাকার জন্য। রাম শর্মা, চিনু শর্মাদের ভরসাতেই এখানেই রয়ে গিয়েছি। আমাদের কোনও ক্ষতিও হয়নি।’’ মনিরুল বলেন, ”আমাদেরও বিপদ ঘটতে পারত, কিন্তু হিন্দু গৃহকর্তাই আমাদের রক্ষা করে চলেছেন। রাম শর্মাদের এই মহানুভবতা আমরা জীবনে ভুলব না।”
বাড়িমালিক রাম শর্মার ছেলে চিনু শর্মা। চিনু বলেন, ”আমাদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই, আমরা সবাই মানুষ। সবাই ঈশ্বরের সন্তান। এতদিন একসঙ্গে থাকছি, কেউ এসে আমাদেরই প্রতিবেশীর ক্ষতি করবে তা কী করে সহ্য করব?” মনিরুল এদিন জানান, পরিস্থিতি আরও একটু স্বাভাবিক হলেই বাড়িতে ফিরবেন। কয়েকদিন কাটিয়ে ফের কর্মস্থলে যেতে চান। বাবা আবদুল মান্নান বলেন, ” পরিবার নিয়ে ছেলে বাড়ি ফিরে আসুক এটা চাইছি। তবে আমরা চিন্তা করছি না।” মান্নান বলেন, ‘ওই এলাকার হিন্দুরাই হিংসার সময় আমার ছেলে ও তার পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছে। এটাই আমাদের দেশের ঐতিহ্য।’
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.