ছবি: প্রতীকী
শুভঙ্কর বসু: অভিযোগের সংখ্যা শূন্যে নামাতে হবে। প্রয়োজনে পশ্চিমবঙ্গের ১০০ শতাংশ বুথ স্পর্শকাতর ঘোষণা করে বিধানসভা নির্বাচন (Assembly Election) করবে কমিশন। ভোট প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে রাজ্য সফরে এসে প্রশাসনিক কর্তাদের এমনই কড়া বার্তা দিলেন এ রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার (Deputy Election commissioner)সুদীপ জৈন। বুঝিয়ে দিলেন, যেনতেন প্রকারেণ এ রাজ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর দিল্লির নির্বাচন কমিশন।
বৃহস্পতিবার, সফরের প্রথম দিন দক্ষিণবঙ্গের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠক করেন সুদীপ জৈন। এছাড়া ‘নিউ নর্মাল’ পরিস্থিতিতে ভোট পরিচালনার জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে সবরকম সহযোগিতা চেয়েছেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তরের এক সিনিয়র অফিসার জানিয়েছেন, “রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে কমিশন (Election Commission)। কোন এলাকায় কারা অশান্তি পাকাচ্ছে, তা নিয়ে এখন থেকেই জেলাগুলিকে প্রতিদিন রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে সবরকম সম্ভাব্য পদক্ষেপ নেবে কমিশন।”
অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। ভোটের সময়ও করোনা জুজু চোখ রাঙাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। সেই কারণে রাজ্যেও বিহার মডেলে ভোট হবে। বিহারে কীভাবে বিধানসভা ভোট পরিচালনা হয়েছে, হাতে-কলমে সেই অভিজ্ঞতা বুঝিয়ে দিতে এদিন জেলাশাসকদের সঙ্গে ভারচুয়াল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিহারের CEO এইচ আর শ্রীনিবাস। রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিয়েছেন। কোভিডবিধি জারি থাকলে বুথের বাইরে ভিড় এড়াতে কী কী পদক্ষেপ প্রয়োজন, সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। সুদীপ জৈনের বার্তা, বিহারের থেকেও উন্নত মানের নির্বাচন করতে হবে পশ্চিমবঙ্গে।
এছাড়াও ভোটার তালিকা প্রস্তুতি পর্যায়ে বুথ লেভেল অফিসারদের নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যসচিব ও জেলা প্রশাসন কর্তাদের সুদীপ জৈনের বার্তা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রথম পদক্ষেপ হল নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন করা। সমস্ত বুথে যাতে বিএলও হিসেবে স্থায়ী কর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। পরিযায়ী শ্রমিক ও নদী ভাঙ্গনের ফলে যাঁদের ঠিকানা পরিবর্তন হয়েছে, তাঁরাও যাতে ভোটার তালিকায় স্থান পান জেলা প্রশাসনিক আধিকারিকদের তা নিশ্চিত করতে বলেছেন তিনি। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সব রকম সহযোগিতা করা হবে ডেপুটি নির্বাচন কমিশনারকে আশ্বস্ত করেছেন মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক সেরে এদিন বিকেলে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে দেখা করেন সুদীপ জৈন। তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ডেপুটি নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করার পর বলেন, “বিজেপি দিনের পর দিন যেভাবে অকথ্য ও কুভাষায় মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে যাচ্ছে সে কথা আমরা কমিশনারকে জানিয়েছি। সকলকেই গণতান্ত্রিক কাঠামোর পরিবৃত্তের মধ্যে থাকা উচিত।” প্রত্যাশিতভাবেই এদিন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কমিশনারের সামনে সরব হয়েছে বিজেপি। তারা নির্বাচনের বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে ছ’মাস আগে থেকেই রাজ্যে নির্বাচনী বিধি কার্যকর ও কেন্দ্র বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। এদিন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন শিশির বাজোরিয়া, ভারতী ঘোষ ও সব্যসাচী দত্ত। শুক্রবার উত্তরবঙ্গে যাবেন সুদীপ জৈন। সেখানে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা। মূলত রাজ্য সফরের পর কমিশনের দফতরে একটি রিপোর্ট জমা দেবেন তিনি। তারপরই রাজ্যে আসবে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.