সুব্রত বিশ্বাস: ভাগাড়ের মাংসের বিরিয়ানি যখন খেতে পেরেছি, তখন ট্রেনের শৌচালয়ের মধ্যে আনা ছানা, পনিরের মিষ্টি খেতে আপত্তি কোথায়? লালগোলা প্যাসেঞ্জারের নিত্যযাত্রী তপন নাথের এই উক্তি মোটেই অপ্রাসঙ্গিক নয়। কলকাতা ও শহরতলির মিষ্টির দোকানগুলিতে যে ছানা ও পনির আসে তার বেশিরভাগই আসে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, নদিয়ার বেথুয়াডহরি, কৃষ্ণনগর প্রভৃতি এলাকা থেকে। লালগোলা প্যাসেঞ্জারের শৌচালয়গুলির কমোড, বেসিনের পাশে ঝুড়ি ঝুড়ি ছানা ও পনির চড়িয়ে কলকাতায় নিয়ে আসেন ছানার ব্যবসায়ীরা। এই ছানাই যাচ্ছে বড়-ছোট মিষ্টির দোকানে। যাত্রীদের ক্ষোভ, শৌচালয়গুলি ঝুড়ি রাখার জন্য ব্যবহার করা যায় না। ফলে চরম অসুবিধার মধ্যে তাঁদের যাত্রা করতে হয়।
যাত্রীদের এনিয়ে ক্ষোভ থাকলেও আসল সমস্যা অন্যত্র। শৌচালয়ের মতো নোংরা পরিবেশে মিষ্টি তৈরির ছানা ও পনির এভাবে আনা অস্বাস্থ্যকর। যা থেকে ছড়াতে পারে রোগজীবাণু। গ্যাসট্রো এন্টেরোলজিস্ট সব্যসাচী পট্টনায়ক জানান, এই ছানা ও পনির থেকে পেটের যে কোনও রোগ ছড়াতে পারে। ডায়েরিয়া, ইকোলাইয়ের মতো রোগ হওয়াটা স্বাভাবিক। এই বিষয়টিকে মোটেই পাত্তা দিতে চাননি মিষ্টির দোকানের মালিকরা। তাঁদের স্পষ্ট জবাব, কাঁচামালের জোগান কোথা থেকে আসছে তা দেখার বিষয় তাঁদের নয়। এইজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ রয়েছে। শিয়ালদহ ডিভিশনের কমার্শিয়াল কর্তাদের কথায়, এভাবে পণ্য পরিবহণ চূড়ান্ত বেআইনি। নিয়মিত আরপিএফ ও কমার্শিয়াল বিভাগের কর্মীরা তল্লাশি চালান। ধরা পড়লে গ্রেপ্তারও করা হয় আইন মাফিক। যাত্রীদের অভিযোগ, নামকে ওয়াস্তে তল্লাশি হলেও এই পদ্ধতি নিয়মিত। যা রেলকর্তাদের কাছে অজানা নয়। তবে এই ছানা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন সমঝোতা রয়েছে এক শ্রেণির রেলকর্মীদের।
পাশাপাশি দুপুরের শান্তিপুর লোকাল, কৃষ্ণনগর লোকালের ভেন্ডর কামরাগুলিতে এত বেশি ছানার ঝুড়ি তোলা হয় যে, অন্য কোনও ভেন্ডার অন্য পণ্য তুলতে পারেন না। ফলে এই নিয়ে নিত্য ক্ষোভ চলছে। অন্য মালের ভেন্ডরদের অভিযোগ, ভেন্ডার কামরায় জায়গা না পেয়ে তাঁরা অন্য কামরাতে মাল তুলতে যান। সেক্ষেত্রেও বাধা পান তাঁরা। ফলে জীবিকায় টান পড়ছে। তাঁদের অভিযোগ, ভেন্ডর মান্থলি নিয়ে বেশি পরিমাণ ছানা তুললেও রেলকর্মীদের সখ্যে শিয়ালদহে এই ছানা স্টেশন থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। এমনকী রেলের আইনে ছানার জল যাতে কামরাতে না পড়ে এজন্য বালতি জাতীয় পাত্রে ছানা বহন করতে হবে। কিন্তু এই নিয়মেরও তোয়াক্কা না করেই ঝুড়িতে ছানা তোলায় ছানার জলে কামরার ক্ষতি হচ্ছে। শিয়ালদহ ডিভিশন জানিয়েছে, ভেন্ডর সিজন টিকিটে একজন ৬০ কিলো মাল ভেন্ডরে নিতে পারেন। তার বেশি হলে জরিমানা। পাশাপাশি, ছানার জল বন্ধে নজরদারি চলবে বলেও জানানো হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.