প্রতীকী ছবি।
সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: আট বছরের জেলাশহর ঝাড়গ্রামে একাধিক বহুতল তৈরি হয়েছে। তাতে বেশিরভাগ বহুতল আবাসনে আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। পাশাপাশি শহরের হোটেল, লজগুলিতে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা থাকলেও জেলা শহরের মূল রাস্তার ধারগুলিতে দোকান-বাজারের চাপ বাড়ায় দিনে দিনে রাস্তা সংকুচিত হয়েছে। ফলে আগুন লাগলে দমকলের ঘটনাস্থলে পৌঁছতে দেরি হয়। বর্তমানে শহরের শিবমন্দির মোড় থেকে বাছুরডোবা পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত উড়ালপুলের রাস্তা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও প্রশ্ন উঠেছে, আদতে দমকল যেতে পারবে কি না।
নয়ের দশকে পরপর দু’বার শহরের মূল ব্যবসাকেন্দ্র জুবিলি মার্কেটে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শতাধিক দোকান পড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। সে সময় বা এখনও সেখানে দমকল ঢোকার পরিস্থিতি নেই। ঝাড়গ্রামের অপরূপ প্রকৃতিক সৌন্দর্যের টানে এখানে পর্যটকরা ভিড় জমান। পর্যটনের এই শহরে প্রচুর হোটেল, লজ গড়ে উঠলেও অধিকাংশের ফায়ার লাইসেন্স থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ সরাই লাইসেন্স নেই। সব থেকে বড় সমস্যা, জেলাজুড়ে মাত্র একটি দমকল কেন্দ্র রয়েছে। দু’টি ইঞ্জিন নিয়ে শহরের এক প্রান্তে রয়েছে এই দমকল কেন্দ্র। গোপীবল্লভপুর, বেলপাহাড়ি, লালগড়ে তিনটি দমকল কেন্দ্র গড়ে ওঠার কথা থাকলেও আজও তা হয়নি।
জানা গিয়েছে, গোপীবল্লভপুরে জমিজট মিটেছে। সেখানে আগামীতে একটি দমকল কেন্দ্র হবে বলে খবর। বর্তমানে একটি মাত্র কেন্দ্র থেকে জেলার বিভিন্ন ব্লকে পৌঁছতে এতটাই সময় লাগে যে, দমকল পৌঁছনোর আগেই অগ্নিসংযোগে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। জানা গিয়েছে, ১৯৯৭ সালে ঝাড়গ্রাম শহরের প্রথম বহুতল আবাসন গড়ে ওঠে। পরে বাম আমলে শহরে বহুতলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২। বর্তমানে ঝাড়গ্রাম শহরে বহুতলের সংখ্যা ১৮৭। এ ছাড়াও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ১৬৭টি বহুতল। শহরে হোটেল, লজের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ। এদের সবার ফায়ার লাইসেন্স থাকলেও সরাই লাইসেন্স নেই। এমনকী, অনেক পুরনো বাজার ও আবাসিক ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুপস্থিত। আগুন নেভানোর জন্য হোটেল, লজে কী কী ব্যবস্থা থাকা উচিত?
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় ফায়ার অ্যালার্ম, পোর্টেবল অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, বহুতল হোটেলের ক্ষেত্রে লিফটবিহীন আলোকিত বিকল্প প্রস্থান পথ। থ্রি-স্টার হোটেলের ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপক স্প্রিঙ্কলার সিস্টেম। সর্বোপরি অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থার নিয়মিত নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ।’’ ঝাড়গ্রাম জেলায় কিছু লজ, হোটেলে পোর্টেবল অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। হোম-স্টেগুলি একতলা সীমিত ঘরবিশিষ্ট। তবে একাংশ দোতলা, তিনতলা অথবা বহুতল লজ-হোটেলগুলিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ পরিকাঠামো নেই। হোটেল, লজগুলিতে সরাই লাইসেন্স থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরাই লাইসেন্স হল, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক হোটেল ও পর্যটন ব্যবসার জন্য প্রদত্ত একটি বিশেষ অনুমতিপত্র। এই লাইসেন্স হোটেল, গেস্ট হাউস এবং অন্যান্য পর্যটন ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয়। লাইসেন্সটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মী ও প্রশাসনিক সংস্কার এবং ই-গভর্ন্যান্স বিভাগ দ্বারা জারি করা হয়। হোটেল চালাতে গেলে সরাই লাইসেন্স করানো বাধ্যতামূলক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.