ছবি: প্রতীকী
রাজা দাস, বালুরঘাট: কথায় কথায় রেফার রোগ দূরে সরিয়ে অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নিয়ে এক মহিলার প্রাণ রক্ষায় এগিয়ে এল বালুরঘাট (Balurghat) সদর হাসপাতাল। গোটা কৃতিত্ব স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডঃ রঞ্জন কুমার মুস্তাফির। কাজের মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সদর বালুরঘাট হাসপাতালকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিতে পেয়ে গর্বিত ওই চিকিৎসক।
জানা গিয়েছে, কুমারগঞ্জ ব্লকের গোপালবাটির বাসিন্দা গোপাল দাস সরকারের স্ত্রী বছর একুশের মিঠু দাস সরকার পেটে ব্যথা নিয়ে ভরতি হন বালুরঘাট সদর হাসপাতালে। অন্য এক চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। মিঠু গর্ভবতী কিনা জানতে প্রস্রাব পরীক্ষা করা হয়। তবে সেখানে নেগেটিভ আসতেই ১৬ নভেম্বর মহিলাকে ছুটি দেওয়া হয়। কিন্ত দু’দিন পর বৃহস্পতিবার চরম পেটে ব্যথা শুরু হয় ওই মহিলার। ফের হাসপাতালে ভরতির জন্য আনা হয় তাঁকে। এবার ওই মহিলা ভরতি হন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডঃ রঞ্জন কুমার মুস্তাফির অধীনে।
রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে আর দেরি করেননি ডাক্তারবাবু। দ্রুততার সঙ্গে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় রোগীকে। র্যাপচার একটোপিক প্রেগনেন্সি সন্দেহে চিকিৎসক অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনটি সফল হয়। সুস্থতার পথে মিঠু দাস সরকার। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডঃ রঞ্জন কুমার মুস্তাফি বলেন, ”হাসপাতালের সামনে এসেই মাথা ঘুরে পড়ে যান মহিলা। তাঁকে জরুরি অবস্থায় এমারজেন্সিতে নিয়ে আসা হয়। দেখেই সন্দেহ হয়, এটি র্যাপচার একটোপিক প্রেগনেন্সি বলে। হার্টবিট, পালস রেট কমতে থাকে। দ্রুত অপারেশান থিয়েটারে (OT) নিয়ে যাওয়া হয়। দেখা যায়, আমার সন্দেহ সঠিক। ওই মহিলার ডানদিকের টিউবটি ফেটে গিয়েছে। যেখানে ২ লিটারের বেশি রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে সেই টিউবটি কেটে বাদ দিয়ে জমাট রক্ত বের করে দেওয়া হয়। আপাতত ওই মহিলা সুস্থ আছেন।”
চিকিৎসকদের আরও বক্তব্য, ওই মহিলার ঋতুচক্র বন্ধ হয়নি। তাই তাঁর প্রস্রাব পরীক্ষার নেগেটিভ আসে। সাধারণ পেট ব্যথা বলেই ধারণা ছিল অন্য চিকিৎসকের। কিন্ত মহিলাদের পেটে দুটি টিউব থাকে। প্রথমে টিউবে প্রেগনেন্সি আসে। ক’দিন পর তা জরায়ুতে যায়। টিউবে শিশু বড় হতে পারে না। কিন্ত এই মহিলার ডান দিকের টিউবে প্রেগনেন্সি আটকে যায়। সেখানে তা ফেটে গিয়ে এই বিপত্তি হয়। ইনফেকশন হয়ে প্রাণ যেতে পারত রোগীর।
সাধারণত জেলা হাসপাতালে এই ধরনের জটিল কেস (Critical case) নিয়ে রোগীরা ভরতি হলে তাঁদের রেফার করা হয়। কিন্তু স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রঞ্জন মুস্তাফি বলছেন, ”আমার কাছে যতগুলো এই ধরনের কেস এসেছে, আমি সাফল্যের সঙ্গে অপারেশন করেছি। ১০-১২ টি অপারেশন হয়েছে আমার অধীনে।” যদিও আক্ষেপের সুরে চিকিৎসকের বক্তব্য, এই ধরনের অপারেশন পুরো টিম ওয়ার্ক করতে হয়। কিন্ত এখানে দু-চারজন সহযোগী ছাড়া কেউ ছিল না। অপারেশন, মনিটরিং থেকে শুরু করে রক্ত জোগাড় করা – পুরোটাই তাঁকে নিজেকে করতে হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.