ছবি: মুকুলেসুর রহমান
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: টাকার দাবি করেছিল। না পেয়ে দাদুকে মারধর শুরু করে নাতি। মদ্যপ ছেলের অপকর্ম সহ্য করতে পারেননি মা। ছেলেকে ঝাঁটা পেটা করেন। আর সেই আক্রোশে মাকেই মাটিতে ফেলে একের পর এক লাথি গুণধর ছেলের। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মায়ের। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানার নাড়ুগ্রামের সিপটা গ্রামে। মৃতের নাম জ্যোৎস্না সিং (৫৫)। অভিযুক্ত ছেলে বসুদেব সিংকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ জানিয়েছে। বুধবার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে তোলা হলে বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। মৃতের ভাই উত্তম ঘোষ বুধবার ময়নাতদন্তের সময় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন। তিনি জানান, বসুদেব মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফেরে। প্রথমেই মা জ্যোৎস্নাদেবীর কাছে ফের মদ খাওয়ার টাকা চায়। তিনি দিতে না চাইতেই অশান্তি শুরু করে অভিযুক্ত। গ্রামেই বাপের বাড়ি জ্যোৎস্নাদেবীর। অশান্তি হচ্ছে দেখে বাবা অজিত ঘোষকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান উত্তমবাবু। বসুদেব তখন দাদুর কাছে টাকা দাবি করে। তিনিও নাতির অন্যায় আবদারে সায় দেননি। সম্প্রতি জ্যোৎস্নাদেবী প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন। সেই টাকায় তাঁদের বাড়িও তৈরি হচ্ছে। অশান্তির মধ্যে সেই প্রসঙ্গ টেনে দাদুকে কটূক্তি করে বসুদেব। অভিযোগ করে, দাদু প্রকল্পের টাকা মেরেছেন। সেই টাকা থেকেই যেন তাকে এখনই ভাগ দেওয়া হয়। অশান্তি চরমে উঠলে সামাল দিতে আসরে নামে মদ্যপ বসুদেবের দুই ভাই পল্লব ও দেবকান্ত। প্রতিবাদ করে। তাঁদের সঙ্গেও হাতাহাতি জুড়ে দেয় বসুদেব।
সেই সময় অজিতবাবু নাতিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ওই টাকায় ঘর তৈরি হয়ে গিয়েছে। কোনও টাকাই নেই। অভিযোগ একথা শুনেই অজিতবাবুর বুকে আঘাত করে বসুদেব। তা দেখে নিজের রাগ ধরে রাখতে পারেননি জ্যোৎস্নাদেবী। হাতের কাছে থাকা ঝাঁটা তুলে ছেলেকে দু’ঘা বসিয়ে দেন। এরপরই বসুদেব ক্ষিপ্ত হয়ে মাকে কিল, চড়, ঘুষি মারতে থাকে। তারপর ধাক্কা দিয়ে ঢালাই রাস্তার উপরে ফেলে বুকে-পেটে লাথি মারতে থাকে। গুরুতর জখম অবস্থায় পরিবারের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় জ্যোৎস্নাদেবীর। তখন তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনে উত্তমবাবুরা রায়না থানায় খবর দেন। পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধার করে। ঘাতক ছেলে বসুদেবকে আটক করে পুলিশ। পরে উত্তমবাবু বসুদেবের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করলে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।। তার ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। প্রতিবেশীরা বসুদেবের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.