রিন্টু ব্রহ্ম, কালনা: ঘরে স্থানাভাব। বৃদ্ধ বাবার ঠাঁই হয়েছে পুকুরপাড়ের মাচার ওপর, শিকল বাঁধা অবস্থায়। এমনই অমানবিক দৃশ্য কালনার মহিষমর্দিনী তলায়। যাতায়াতের পথে দৃশ্যটি চোখে পড়েছে সবারই। কিন্তু তাঁকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসনেনি কেউ। প্রায় দু’মাসের শিকলবন্দি দশা থেকে স্থানীয় কাউন্সিলরের তৎপরতায় মুক্ত হলেন বছর ষাটের বৃদ্ধ নির্মল চট্টোপাধ্যায়। ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুনীল চৌধুরী নিজে গিয়ে তাঁর পায়ের শিকল খুলে দেন। শীতের মোকাবিলায় হাতে তুলে দেন কম্বল, শীতবস্ত্র। দু’মাসের বন্দিদশায় বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়ায়, তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেন কাউন্সিলর।
মহিষমর্দিনীতলা লাগোয়া সরিষাপট্টির বাড়ি সংলগ্ন একটি পুকুরের পাড়। সেখানে মাচা তৈরি করে তার ওপর কাঠের পাটাতনে রয়েছে বিছানা। তার ওপর পায়ে লোহার মোটা শিকল বাঁধা অবস্থায় দেখা গেল বৃদ্ধ নির্মল চট্টোপাধ্যায়কে। কনকনে শীতের মধ্যে সেখানেই দিনরাত্রি যাপন। পরিবারের সদস্যরা সময়মতো খাবার দিয়ে আবার চলে যান। শৌচকর্ম থেকে হাঁটাচলা- সবেতেই সমস্যায় পড়ছিলেন তিনি।তাও প্রায় মাস দুই ধরে এরকম অবস্থা। এমন অমানবিক দৃশ্য দেখে, এগিয়ে এসেছেন কালনা পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুনীল চৌধুরী। বৃহস্পতিবার তিনি নিজে গিয়েই খুলে দেন বৃদ্ধের পায়ে বাঁধা শিকল। তাঁর জন্য শীতের পোশাক, মাথায় ত্রিপলের ব্যবস্থা করে দেন।
[বাবাকে বেধড়ক মার ছেলের, নার্সিংহোমে ঠাঁই বৃদ্ধের]
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনার মহিষমর্দিনীতলা লাগোয়া সরিষা পট্টি এলাকায় নির্মল চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের বসবাস। পারিবারিক সূত্রে তাঁরা কাটোয়ার দাঁইহাটের বাসিন্দা। স্টেশন মাস্টার বাবা কালনায় বদলি হওয়ার পর থেকে তাঁরা এই মহিষমর্দিনীতলার সরিষা পট্টিতে বসবাস শুরু করেন। তিন ছেলে নিয়ে সংসার ছিল মোটের ওপর মন্দ না। নির্মলবাবুর মেজো ছেলের স্ত্রী চাঁদনী চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘একটি ছোট্ট ঘরেই তাঁদের ছ’জনের সংসার। সন্তানদের নিয়ে থাকার জায়গা নেই। তাই পুকুরপাড়ে মাচা তৈরি করে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চোখে কম দেখেন বছর ষাটের বৃদ্ধ। শারীরিক তো বটেই, মানসিকভাবেও কিছুটা অসুস্থ। রাত হলেই তিনি মাচা থেকে নেমে পাশের পুকুরে নেমে যান। আমরাও সকলেই কাজে ব্যস্ত থাকি। কোনও বিপদ যাতে না ঘটে তাই বাধ্য হয়েই শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।` চাঁদনী দেবী আরও দাবী করেন, দিনের বেলায় নয়। একমাত্র রাতের বেলাতেই তাঁকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এসব শোনার পরই কাউন্সিলর সুনীল চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। কোনও সরকারি হোমে যদি বৃদ্ধের থাকার ব্যবস্থা করা যায়, তা দেখা হচ্ছে।` তবে আপাতত শিকলমুক্ত হয়ে কিছুটা স্বস্তিতে নির্মল চট্টোপাধ্যায়।
ছবি: মোহন সাহা
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.