Advertisement
Advertisement
Purulia

১৬০০ যুদ্ধবন্দির দায়িত্বে ছিলেন! পাক হানাদারদের বেয়াদপি ভোলেননি ৮৫-র পাঁচকড়ি

১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে শামিল হন পাঁচকড়ি।

Experience of Purulia Ex Indian Army Panchkari Banerjee
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:May 11, 2025 11:48 pm
  • Updated:May 11, 2025 11:48 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ঘড়ির কাঁটায় রাত দেড়টা। পাকিস্তান বর্ডার শিয়ালকোট সেক্টরের কাছে কালুচকে তখন অবিরাম গুলিবর্ষণ। আকাশে যুদ্ধবিমান। মাটিতে ধেয়ে আসছে আগুনের গোলা। হাতে থাকা লাইট মেশিনগান দিয়ে সেই যুদ্ধবিমানকে যে মাটিতে নামাতে হবে! নিজেকেও বাঁচাতে হবে। বাঁচাতে হবে বাহিনীকে, সিনিয়ার অফিসারকে। ওই অবস্থায়
গাঁইতি দিয়ে ট্রেঞ্চ কেটে মাটির তলায় লুকিয়ে পাকিস্তানকে জবাব দিয়েছিলেন তিনি। তারপর রাত শেষে ভোরের আকাশে আর দেখা যায়নি কোন ফাইটার জেট। ১৯৬৫ সালের আগস্টে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করার কথা এভাবেই বলে যাচ্ছিলেন ৮৫ বছরের পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়।

পুরুলিয়া ২ নম্বর ব্লকের চয়নপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধে শামিল হন। তাঁর বয়স ৮৫ পার হলেও দেখে বোঝার উপায় নেই। দেশকে বাঁচাতে তাঁর আবেগ এমনই যে তিরিশের তরুণের মতোই যেন হাতে লাইট মেশিনগান নিয়ে এখনই পাক সীমানায় গিয়ে যুদ্ধ করবেন! তাঁর কথায়, ” এখন তো আমাকে আর ডাকার কোনও পরিস্থিতি নেই। যদি ডাকা হত আমি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তুলে চলে যেতাম পাক সীমানায়।” যেমনটা গিয়েছিলেন রিজার্ভে থাকার সময় ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে। হরিদ্বারের কাছে উত্তরপ্রদেশের রুরকি ট্রেনিং সেন্টারে মোতায়েন থেকে ১৬০০ যুদ্ধবন্দিকে নজরদারিতে রেখেছিলেন। চোখের সামনে ভাসছে সেই ছবি।” সেই সময় সামগ্রিকভাবেই যুদ্ধ হয়েছিল।

Advertisement

রুরকি এলাকাতেও রাতের বেলা আলো নিভিয়ে দেওয়া হত। সাইরেন বাজত। এলাকার কোনও বাড়িতে আলো জ্বলছে নাকি তা দেখে সতর্ক করতে হত। সেই সঙ্গে যুদ্ধবন্দি হয়ে থাকা পাক সেনার ওপর নজরদারির কাজ চলত।” ওই ট্রেনিং স্থল থেকেই থেকেই তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, বর্তমানে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে চলে যান এলএমজি হাতে। তিনি ছিলেন ল্যান্স নায়েক। আজ ভারত-পাক যুদ্ধের আবহে নিজের অজ পাড়া গাঁয়ের বাড়িতে বসে সেই সব স্মৃতি আওড়াচ্ছেন বছর ৮৫-র ওই অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী।

খবরের কাগজে চোখ আর কবিতা লিখে তাঁর দিন কাটে। এখন অবশ্য যুদ্ধের আবহে
সর্বদাই চোখ রাখছেন টিভিতে। তাঁর কথায়, “টিভি খুললেই পাকিস্তানের আচরণ দেখে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। একটা বেইমান দেশ যেভাবে যুদ্ধ বিরতি লঙ্ঘন করেছে তাতে উচিত শিক্ষা দেওয়া দরকার। যুদ্ধ কেন হয়? ওদের জায়গা আমরা নেওয়ার চেষ্টা করব। আমাদের জায়গা ওরা নেবে। এটাই তো যুদ্ধ। কিন্তু এমন বেইমানি নয়। আর বরদাস্ত করা যাবে না, অনেক হয়েছে। “

মাত্র ২২ বছর বয়সে বাড়ির কাউকে না জানিয়ে পুরুলিয়া শহরে এসে সেনাবাহিনীতে পরীক্ষা দিয়ে ১৯৬৩ সালের ২১ জানুয়ারি সেনাতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তারপর উত্তরপ্রদেশের রুরকিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাঁর প্রথম পোস্টিং হয় কাশ্মীরের জম্মুতে। সেখান থেকে শ্রীনগর। তারপর লাদাখ। আর লাদাখ থেকেই ১৯৬৫-র যুদ্ধে পাক সীমানায় একেবারে শিয়ালকোট সেক্টরের কালুচকে। মাত্র ৫০ টাকায় তিনি সেনাবাহিনীতে কাজ শুরু করেন। আর যখন অবসর নেন ১৯৭৬ সালে তখন তাঁর বেতন ছিল সাড়ে ৪০০ টাকা। চারটে মেডেল পেয়েছিলেন তিনি। এখনও ওই মেডেলই যেন তাঁকে তাতিয়ে দিচ্ছে। নিয়ে যেতে চাইছে পাক সীমানার ব্যাটেলফিল্ডে। ৮৫-র বৃদ্ধের মন যে পড়ে রয়েছে সেখানেই!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement