Advertisement
Advertisement
Purulia

ঠিক যেন স্পেশাল ২৬! আয়কর আধিকারিক সেজে ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা সোনা-টাকা লুট, তারপর…

ব্যাপারটা ঠিক কী?

Fake IT officer raids house of businessman in purulia
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:April 21, 2025 1:54 pm
  • Updated:April 21, 2025 2:14 pm  

অমিত সিং দেও: যেন একেবারে হিন্দি থ্রিলার ছবি ‘স্পেশাল ২৬’। সেই ঢঙে একেবারে একডজন গাড়ির কনভয় নিয়ে আয়কর হানা পুরুলিয়ার কোটশিলার অভিজাত বিড়ি ব্যবসায়ীর বাড়িতে। পুলিশি তৎপরতায় সেই হানার পর্দাফাঁস! দেখা গেল অপারেশনই ভুয়ো! আর মাস্টারমাইন্ড এক সিআরপিএফ জওয়ান। টিমে ছিলেন দুই মহিলাও। আপাতত জালে ঝাড়খণ্ডের সাতজন। পুরুলিয়ায় এর আগেও একাধিকবার বড় অপরাধে যোগ মিলেছে ঝাড়খণ্ড গ্যাংয়ের। তবে এবারেরটা অভিনব।

কোটশিলায় বামনিয়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী কিরীটি কুমারের বাড়িতে দিন বারো আগে আয়কর আধিকারিক পরিচয়ে একটি টিম হানা দেয়। চাষ মোড়-তুলিন রাজ্য সড়কের গা ঘেঁষে ওই ব্যবসায়ীর বাড়ি ও কার্যালয়। রোজকার মতো গত ৮ এপ্রিল তিনি রাতে ব্যবসার কাজ মিটিয়ে বাড়ি ফেরেন। এমন সময় কয়েকজন পুরুষ ও মহিলা তাঁর বাড়িতে হাজির। ওই আগন্তুকরা যেন একেবারে হিট হিন্দি থ্রিলার ছবি ‘স্পেশাল ২৬’-এর চরিত্র। ঢুকেই তাঁরা ব্যবসায়ী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ফোন নিজেদের হেফাজতে নিয়ে বন্ধ করে দেয়। এরপর পরিবারের সবাইকে বসিয়ে রেখে ঘর ও অফিস জুড়ে তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালায়। আলমারির তালা ভেঙে টাকা ও অলঙ্কার এক জায়গায় জড়ো করে। ঘণ্টাখানেকের এই অপারেশনে নগদ প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা এবং সোনা ও রূপো মিলিয়ে প্রায় ৫ লক্ষ টাকার গয়না হাতিয়ে নেয় ভুয়ো আয়কর আধিকারিকরা। এরপর তারা ওই ব্যবসায়ীকে একটি সিজার লিস্ট ধরিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বাড়িতে থাকা সিসি ক্যামেরার হার্ড ডিস্ক খুলে নেয়। পাশাপশি ওই ব্যবসায়ীর একটি চার চাকার গাড়ি ও একজন কর্মচারীকেও তুলে নিয়ে যায়। অভিযানের ধরন দেখে একবারও ওই পরিবারের সন্দেহ হয়নি।

Advertisement
ছবি: অমিত সিং দেও।

প্রায় ঘণ্টাখানেক পর তাঁদের গাড়ি ও কর্মীরা বাড়ি ফিরে না আসায় কৌতূহল বেড়ে যায়। এক পড়শির মোবাইল থেকে থানায় ফোন করতেই কার্যত পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায় ওই ব্যবসায়ীর। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কোটশিলা খানার পুলিশ। এরপর রাতে গাড়ি ও ওই কর্মীকে রাঁচির জোনহা বাজার থেকে উদ্ধার করা হয়। চালকের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে তাঁকে জোনহা বাজারে থামতে বলে গাড়িতে থাকা সওয়ারিরা নেমে পড়ে। কিন্তু আর ফেরেনি। ১ এপ্রিল ওই বিড়ি ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়। ওদিন জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ জেলা পুলিশের একাধিক আধিকারিক ঘটনাস্থলে যান। ওদিনই কয়েকজন ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিককে মাথায় রেখে তৈরি হয় একটি বিশেষ তদন্তকারী দল বা ‘সিট’। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে গত শনিবার সারারাত ধরে প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের রাঁচি, বুন্ডু ও খুঁটি এলাকায় জেলা পুলিশের একাধিক দল হানা দিয়ে দু’জন মহিলা ও পাঁচ ব্যক্তিকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর রবিবার রাতে গ্রেপ্তার করে তাদের। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে, ধৃতদের মধ্যে একজন কোটশিলার বাসিন্দা। ওই ব্যক্তি স্থানীয় সব তথ্য দিয়ে ওই অপারেশনে সাহায্য করেছে। বাকি ৬ জনের মধ্যে ঝাড়খণ্ডের সিআরপিএফ বাহিনীর ৯৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের একজন জওয়ান। ওই জওয়ানের বিরুদ্ধে বৃক্ত থানায় একটি প্রতারণার মামলাও রয়েছে। এছাড়া ধৃত দু’জন মহিলা পেশায় হোটেল কর্মী।

তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন, ওই দুষ্কৃতী দলের কাছে খবর ছিল বিড়ি ব্যবসায়ী কিরীটি কুমারের বাড়িতে নগদ ও অলঙ্কার মিলিয়ে প্রায় কোটি টাকার সম্পত্তি আছে। রেইকি করার পর ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল তৈরি হয়। এরপর ঘটনার দিন একাধিক জায়গা থেকে ১২টি গাড়ি ভাড়া করে ওই সশস্ত্র দুষ্কৃতী দলটি কোটশিলায় পৌঁছয়। ব্যবসায়ীর বাড়িতে দু’টি গাড়ি ও ৮ জনকে নামিয়ে ফিরে চলে যায়। সেই সঙ্গে অপারেশন চলাকালীন ওই ব্যবসায়ীর বাড়ির আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাকি গাড়িতে ব্যাকআপ হিসাবে দুষ্কৃতীদের অন্য টিমের সদস্যরা ছিল ওইদিন। অপারেশন শেষে ফিরে যাওয়ার সময় গাড়ির ঘাটতি হওয়াতেই ব্যবসায়ীর গাড়িটি তারা বাবহার করে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আয়কর দপ্তরের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে বিড়ি ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে একজন সিআরপিএফ জওয়ান হিসাবে নিজেকে দাবি করেছে। তার পরিচয় আমরা খতিয়ে দেখছি।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement