চন্দ্রজিৎ মজুমদার,কান্দি: একদিকে সংসারের অভাব। অপরদিকে ধার-দেনা করে চাষ করা ভাগের জমিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে নষ্ট ফসল। জোড়া চাপ সহ্য করতে পারেননি মুর্শিদাবাদের বড়ঞার কৃষক জীবন ভল্লা। শেষপর্যন্ত মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন তিনি। রবিবার সকালে নিজের বাড়ি থেকেই তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।
বাড়ির লোকেরা ও গ্রামবাসীদের পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়। এই ঘটনায় গোটা গ্রাম শোকাহত। পুলিশের কথায়, ”মৃত যুবকের নাম জীবন ভল্লা, বয়স ৩০ বছর। বাড়ির একমাত্র রোজগেরে ছিলেন জীবন। চাষবাস করে কোনওরকমে দিন চলত। রবিবার বাড়িতেই ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। কান্দি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে এলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। দেহ কান্দি মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর বাড়ির লোকেদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।”
ছয় ও আট দুই ছেলেকে নিয়ে দিশেহারা জীবনের স্ত্রী। পরিবারের দাবি, বিভিন্ন প্রাইভেট ব্যাংক থেকে নেওয়া গ্ৰুপ লোনের টাকা শোধ করতে না পারার চিন্তাতেই আত্মঘাতী হয়েছেন জীবন। স্ত্রী টুম্পা ভল্লা জানান, দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল ওই গ্ৰুপ লোন। তার উপর জমির ধান নষ্ট। তাঁদের দাবি, ওই লোনের টাকা পরিশোধ করতে না পেরেই আত্মঘাতী হয়েছে জীবন। টুম্পা ভল্লা আরও বলছেন, ”ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেওয়ার পর গ্রামেরই বাসিন্দার দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন আমার স্বামী।কিন্তু ওই ধান সম্প্রতি প্রাকৃতিক বিপর্যয় নষ্ট হয়ে যায়। তারপর এই আমার স্বামী আর ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। আমরা বহুবার বুঝিয়েছি যে সরকারকে বললে সরকার নিশ্চয়ই কিছু ব্যবস্থা করবে। কিন্তু আমার স্বামী বুঝতে চায়নি।”
ঘটনায় শুধু জীবনের পরিবারই নয়, বড়ঞার সাহেবনগর গ্রামের বাসিন্দারাও শোকাহত। তাঁরা বলছেন, জীবন ভল্লার মতো যুবক গ্রামে কমই রয়েছে। খুবই সৎ গরিব ছেলে ছিল জীবন। পরিবারের প্রধান বলতে জীবন ছিল রোজগেরে। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরে ছিল ওই যুবক। প্রথম থেকেই ইচ্ছা ছিল ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করে জমিজায়গা কিনে কিছুটা স্বচ্ছল হওয়ার। কিন্তু ঋণের বোঝা সব কেড়ে নিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.