অর্ণব দাস: সন্তানশোকের মতো যন্ত্রণা পেয়েছিলেন। কিন্তু নতুন করে বাঁচার আশা ছাড়েননি। সেই কারণেই বয়সের তোয়াক্কা না করে আবারও মা-বাবা হতে চেয়েছিলেন। অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। ভাবিয়েছে বিপদের সম্ভাবনা। কিন্তু হাল ছাড়েননি বর্ষীয়ান দম্পতি। মনের জোরেই ৫৪ বছর বয়সে যমজ সন্তানের মা হলেন অশোকনগরের রূপা দত্ত। সত্তর বছর বয়সে বাবা হলেন তপন দত্ত।
পুলিশে চাকরি করতেন তপনবাবু। ২০১৯ সালে ট্রেন দুর্ঘটনায় তাঁর একমাত্র ছেলে অনিন্দ্যর মৃত্যু হয়। তরুণ ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে যান দত্ত দম্পতি। একাকীত্বের যন্ত্রণা অসহ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু নতুন করে বাঁচার সিদ্ধান্ত নেন দু’জনে। আবারও মা-বাবা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু রূপাদেবীর বয়স ৫৪, আর তপনবাবু সত্তর বছরের বৃদ্ধ। কীভাবে সম্ভব?
এই প্রশ্ন নিয়েই একাধিক ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন দত্ত দম্পতি। কোথাও সদুত্তর পাচ্ছিলেন না। শেষে হাওড়ার বালির এক ডাক্তার তাঁদের ভরসা জোগান। তাঁর পরামর্শেই শুরু হয় চিকিৎসা। গর্ভবতী হন রূপা দত্ত। বয়সের কারণে নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকে। তপনবাবু জানান, রূপাদেবীর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল। ঠিক তার আগের মুহূর্তেই সেই বালির চিকিৎসক পিছিয়ে যান।
শেষে পিয়ারলেস হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগে যোগাযোগ করেন তপন দত্ত। বিভাগের প্রধান বিমান ঘোষের তত্ত্বাবধানে রূপাদেবীকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই হয় অস্ত্রোপচার। এক ছেলে ও এক মেয়ের মা-বাবা হন রূপা ও তপন দত্ত। অক্টোবর মাসের ১০ তারিখ দত্ত দম্পতির সন্তানদের জন্ম হয়। নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখ স্ত্রী ও সন্তানদের অশোকনগরে নিয়ে আসেন তপনবাবু। ফুল সাজিয়ে, শঙ্খ বাজিয়ে তাঁদের স্বাগত জানান পরিবার ও স্বজনরা। বড় ছেলেকে হারানোর যন্ত্রণা সারা জীবন ভুলতে পারবেন না তপনবাবু। কিন্তু সদ্যোজাত ছেলে-মেয়েকে দেখে কিছুটা শান্তি পাবেন। তাঁদের মানুষ করাই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.