সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সন্ধ্যা ছটা না বাজতেই গৃহবন্দি পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়তলি। ঝুপঝাপ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দরজা। বাইরের আলো জ্বললেও নিভিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঘরের আলো। যাতে ঘরের মানুষ আছে তা যেন টের না পায়। ওড়িশার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে আসা বাঘিনী জিনাতের ভয়ে এমনই ছবি। তাই বুধবার সকাল থেকেই দেখা যায় রাইকা পাহাড়তলি এলাকার মানুষজন আত্মরক্ষার্থে লাঠি হাতে ঘুরছেন। বৃহস্পতিবারও একই ছবি ধরা পড়ল।
রাহামদা, উদলবনি, কেসরা, লেদাশোল, ঘাঘরা, কেন্দাপাড়া, পোপো একেবারে সিঁটিয়ে রয়েছে জিনাত আতঙ্কে। রবিবার- সোমবার ওই ছবিটা ছিল না। বাঘিনী আসায় ওই এলাকার বনাঞ্চল সমৃদ্ধ হবে এমন কথাও মুখে মুখে ফিরতে থাকে। মঙ্গলবার দুপুরের পর সেই ছবিটা আমূল বদলে যায় । ওই দিন দুপুরে রাইকা পাহাড়ের টিলা ঝাঁঝা-ভাঁড়রি থেকে একের পর এক মৃত ও জখম ছাগল উদ্ধার হতেই ভয় বাড়তে থাকে রাইকা পাহাড়তলির। রাহামদা- লেদাশোল, লেদাশোল-ঘাঘরা রাস্তায় দিনের বেলাতেও মানুষজনের যাতায়াত কমে গিয়েছে। একইভাবে দিনের বেলাতেও শুনশান ঝাঁড়া-ভাঁড়রি টিলা ও রাইকা পাহাড়ের মাঝে থাকা রাস্তাও।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে রাহামদা গ্রামের শবর টোলা পাহাড় ঘিরে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও আতঙ্ক কাটেনি। রাহামদা গ্রামের শবর টোলার বাবুরাম শবর, লক্ষণ শবর বলেন, “আমরা ভীষণ ভয়ে রয়েছি। জানি না গ্রামে বাঘিনী ঢুকে গেলে কী হবে? জাল কি আটকাতে পারবে?” রবিবার রাইকা পাহাড়ে বাঘ ঢোকার পর বনদপ্তরের মাইকিং-র জেরে ওই এলাকার মানুষজন গবাদি পশু জঙ্গলে পাঠাননি। সোমবার রাত পর্যন্ত বাঘিনীর গতিবিধির কোনও খবর না পাওয়ায় মঙ্গলবার ভোর থেকেই জঙ্গলে পাঠালে বিপদ বাড়ে। মৃত ও জখম ছাগল উদ্ধার হওয়ার পর বুধবার থেকে কোনও গবাদি পশু আর জঙ্গলে পাঠাচ্ছে না রাইকা পাহাড়তলির মানুষজন। এদিন সকাল পর্যন্ত ২০ টি ছাগলের খোঁজ মেলেনি। বনদপ্তর জানিয়েছে, যে সকল ছাগল মারা গিয়েছে বা জখম হয়েছে তাদের দ্রুত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.