সম্যক খান, মেদিনীপুর: বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরামের চিতাভূমিতে বৃক্ষরোপণ করে শ্রদ্ধা জানাতে মেদিনীপুর থেকে রওনা হলেন তাঁর নাতি সুব্রত রায়। ক্ষুদিরামের মাতৃসম দিদি অপরূপা দেবীর ছোট ছেলে ভীমাচরণ রায়ের পুত্র তিনি। একটি গাছের সঙ্গে তিনি নিয়ে গেলেন মেদিনীপুরের মাটি ও সিদ্ধেশ্বরী কালী মায়ের চরণামৃত। সুব্রতবাবুর সঙ্গেই রওনা দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী মমতা রায় ও ক্ষুদিরাম গবেষক অরিন্দম ভৌমিক। শনিবার ক্ষুদিরাম বসুর ১১১তম বলিদান দিবস। ওইদিনই শহিদের চিতাভূমিতে বৃক্ষরোপণ করবেন সুব্রতবাবু।
১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট দেশের সব থেকে কমবয়সী বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুকে বিহারের মুজফ্ফরপুর জেলে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। ঐতিহাসিক ওই দিনটিকেই স্মরণ করে প্রয়াত বিপ্লবীর স্মরণে তাঁর চিতাভূমিতে বৃক্ষরোপণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন তাঁর নাতি। এপ্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে প্রতিবছর ১১ আগস্ট মৃত্যুঞ্জয়ী ওই শহিদের স্মরণে তাঁর চিতাভূমিতে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এবার সেখানে বৃক্ষরোপণ করতে চান সুব্রত রায়।
ছোট্ট জীবনযাত্রার শেষবেলায় মেদিনীপুরের জন্য মন কেঁদেছিল বিপ্লবী ক্ষুদিরামের। ফাঁসিকাঠে ঝোলার আগে তিনি চেয়েছিলেন পবিত্র জন্মভূমিকে একবার দেখতে। শুধু তাই নয়, তাঁর চারটি শেষ ইচ্ছার কথা পৌঁছে দিয়েছিলেন তৎকালীন অত্যাচারী ব্রিটিশ সরকারের কাছে। তাঁর প্রথম ইচ্ছা ছিল জন্মভূমি মেদিনীপুরকে দেখার। এরপর দিদি ও ভাগ্নে ললিতের সঙ্গেও দেখা করতে চেয়েছিলেন, জানতে চেয়েছিলেন ভাগনি শিবরানীর বিয়ে হয়েছে কি না। আর তাঁর শেষ ইচ্ছাটি ছিল সিদ্ধেশ্বরী কালীমায়ের পাদোদক তথা চরণামৃত পান করার। এর বদলে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষুদিরামকে কেবলমাত্র জানানো হয়েছিল যে শিবরানীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, তাঁর বাকি তিনটি ইচ্ছা পূরণ করা হয়নি। এরপর মজফফরপুর জেলেই মাথা উঁচু করে হাসিমুখে ফাঁসিকাঠে ঝুলেছিলেন ক্ষুদিরাম।
জীবদ্দশায় না হলেও গতবছর প্রয়াত ক্ষুদিরামের শেষ ইচ্ছাগুলি পূরণ করার চেষ্টা করেছিলেন অরিন্দমবাবুদের মতো ১৩ জন ক্ষুদিরামপ্রেমী। অবিভক্ত মেদিনীপুরের থাকা ক্ষুদিরামের স্মৃতিবিজড়িত চারটি জায়গা তমলুকের হ্যামিলটন স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, দাশপুরের হাটগেছিয়া ও মেদিনীপুরের মোহবনী ও হবিবপুরের মাটি সংগ্রহ করেছিলেন। তারপর সেই মাটির সঙ্গে ক্ষুদিরামের দিদি ও ভাগনের ছবি আর সিদ্ধেশ্বরী কালীমায়ের পাদোদক নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন মুজফ্ফরপুরের চিতাভূমিতে। সেখান থেকে চিতাভূমির মাটি ও গণ্ডক নদীর জলও বয়ে এনেছিলেন তাঁরা। সেই মাটি ও জল দিয়ে গতবছর স্বাধীনতা দিবসে কলেজিয়েট স্কুল এবং তাঁর জন্মভিটায় গাছও লাগানো হয়েছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.