চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: কোলা ও সোনার বিয়ে হল জাঁকজমক করে। বিয়ের আসর বসল সিদ্ধপুরের নাপিত পাড়ায়। বরযাত্রী সূত্রধর পাড়ার বাসিন্দারা বিয়ের আসরে এলেন তাসা ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে। বুধবার রাত ৮টা নাগাদ ছিল লগ্ন। শুভবিবাহ সম্পন্ন হল মুক্তি চক্রবর্তীর পৌরহিত্যে। বিয়ের জন্য ছাদনাতলা, বসুধারা, সিঁদুরদান, নান্নিমুখ, জামাইবরণ, আশীর্বাদের ধান-দূর্বা, খাওয়া-দাওয়া সব ধরনের ব্যবস্থাই ছিল এদিন। ছিল বর-কনের সঙ্গে সেলফি তোলার হিড়িকও। শুধু তাই নয়, বিয়েতে আমন্ত্রিতরা ব্যাঙ দম্পতিকে দিয়েছেন নগদ অর্থ-সহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী। বিয়ে শেষ হতেই রাতে ঝেঁপে নামল বৃষ্টি।
ভরা শ্রাবণেও ছিল না বৃষ্টির দেখা। বৃষ্টির ঘাটতি নাকি প্রায় ৭০ শতাংশ। এখনও পর্যন্ত ধানের বীজতলার কাজ শুরু হয়নি। যে কয়েকটি জায়গায় বীজতলা হয়েছে তাও জলের অভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মাথায় হাত পড়েছে চাষীদের। এই অবস্থায় বৃষ্টির জন্য জামুড়িয়াবাসী বিয়ে দিল দুই কোলা ব্যাঙ ও সোনা ব্যাঙের। বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল বিকেল থেকেই। তাসা বাজিয়ে মিছিল করে জলসাইতে যান গ্রামবাসীরা। মঙ্গলঘট পেতে, আলপনা এঁকে, মাটির চাতাল তৈরি করে সাজানো হয় চাল-কলা-সুপারির নৈবেদ্য। গ্রামের পুরোহিত মুক্তি চক্রবর্তী শুভ বিবাহের আগে বরণ পুজো সম্পন্ন করেন। কনের মা দিপু মণ্ডল ও বাবা লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল বসেন পুজোয়। বসুধারা দিয়ে ছাদনাতলায় দিপু নিয়ে আসেন পাত্রী সোনাকে। এরইমধ্যে সূত্রধর পাড়া থেকে ব্যান্ড বাজিয়ে বরযাত্রী আসেন বিবাহ বাসরে। বরপক্ষকে আপ্যায়ন করে কনেপক্ষ। বরকর্তা বাবলু ঘোষ ও কর্ত্রী আরতি পাল ছাদনাতলায় নিয়ে আসেন বর বাবাজীবনকে। তারপরেই হিন্দুশাস্ত্র মতে শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয় দুজনের। মালা বদল, সিঁদুর দান, কনকাঞ্জলির পর সম্পন্ন বিয়ের রীতি-রেওয়াজ। বরপক্ষের ৭০ জনকে ভাত, মাছের ঝোল, চাটনি, দই, পাঁপড়, মিষ্টি খাওয়ানো হয় আপ্যায়ন করে।
কেন এই ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন? উদ্যোক্তা গ্রামবাসীদের মধ্যে সারদা ভাণ্ডারি, সন্ধ্যা ঘোষ, বংশী ভাণ্ডারি, লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডলরা বলেন বৃষ্টির আবাহন করতেই ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি আমরা। গ্রামবাসীদের দাবি, ‘এই শিল্পাঞ্চলে জামুড়িয়ার সিদ্ধপুর কৃষিপ্রধান এলাকা। এই শ্রাবণেও বৃষ্টির দেখা নেই। চাষের উপযোগী বৃষ্টি আমাদের প্রয়োজন। পুকুর মাঠঘাট ভরার মতো বৃষ্টির দরকার। তাই গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে দুই ব্যাঙের রাজকীয়ভাবে বিয়ে দিলাম আমরা।’
হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ রামায়ণে বর্ণিত বৃষ্টির দেবতাকে খুশি করার জন্য সেই সময়ে ব্যাঙের বিয়ের প্রচলন ছিল। ত্রেতা যুগের সেই ধারা অনুসারে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন এর আগেও করেছেন জামুড়িয়ার বাসিন্দারা। বছর দুয়েক আগে জামুড়িয়ার নণ্ডী গ্রামে এইভাবেই জাঁকজমক করে ব্যাঙের বিয়ে হয়েছিল। এবার বিয়ে হল সিদ্ধপুরে। বুধবার রাতে মুষলধারে বৃষ্টি দেখে গ্রামের চাষি থেকে সাধারণ মানুষ খুশিতে মেতে ওঠেন। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের রাজ্য কাউন্সিলের সদস্য কিংশুক মুখোপাধ্যায় জানান, কুসংস্কারে মেতেছেন একশ্রেণির মানুষ। ব্যাঙের বিয়ের সঙ্গে বর্ষার কোনও সম্পর্ক নেই। বর্ষা এলে দুটি ব্যাঙের মিলন হয় এটা বিজ্ঞান। বিয়ে দিলে বর্ষা হয় না – দ্বিতীয় মতটি কুসংস্কার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.