ধীমান রায়, কাটোয়া: একেই সংসারে নুন আনে পান্তা ফুরোয়। তার ওপর স্বামী যেটুকু রোজগার করেন তা মদের নেশায় উড়িয়ে দেন। অসহায় গৃহবধূ একটা কাজের সন্ধানে ছিলেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক হকার তাঁকে হোটেলে রাঁধুনির কাজ করে দেবে বলে নিয়ে যায় নিজের গ্রামে। তারপর তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে চারজন মিলে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। ধর্ষিতার কাছে যেটুকু গহনা ছিল তাও কেড়ে নেয় ওই ধর্ষকরা। এরপর তাকে ছেড়ে দিয়ে আসে মহিলার গ্রামে। ৪ মাস আগের ঘটনা। এখানেই কিন্তু নাটকের যবনিকা পতন হয়নি। অসহায় মহিলা জানতেন না ওই প্রতারক ও ধর্ষকের নাম। শুধু তার জানা ছিল গ্রামের নামটি। আর সেই ঘটনার পর থেকেই নির্যাতিতা পণ করেছিলেন তিনি অপরাধীদের ধরবেনই। শেষ পর্যন্ত সফলও হলেন তিনি।
[বিজেপির ‘চক্রান্তে’ অশান্ত পাহাড়, মোদির কুশপুতুল নিয়ে প্রতিবাদের পথে তৃণমূল]
বীরভূমের নানুরের গোপালডি গ্রামের সেই নির্যাতিতা কেতুগ্রামের খাসপুরে গিয়ে ধরিয়ে দিলেন অপরাধীকে। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জানবক্স শেখকে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিরিশের জানবক্স গ্রামে গ্রামে ঘুরে কেরোসিন তেল কিনত। সেই সূত্রে গোপালডি গ্রামে প্রায়ই যেত জানবক্স। এভাবেই ওই মহিলার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মহিলার স্বামী মাতাল। সন্তান আছে। অভাবের কারণে কাজ খুঁজছিলেন। মহিলা বলেন, ৪ মাস আগে জানবক্স হোটেলে রাঁধুনির কাজ করে দেবে বলে নিয়ে গিয়েছিল খাসপুরে। একটি হোটেলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্যাতিতার বক্তব্য, খাওয়ার পর একটি ফাঁকা মাঠে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি দেখতে পান আরও তিনজনকে। এরপর চারজন মিলে তাঁর সম্ভ্রম নষ্ট করে।
[এবছর ফের টেট পরীক্ষা, নিয়োগ ২৫ হাজার পদে]
গণধর্ষণের পর তাঁকে কেতুগ্রামের গোপালডি গ্রামের কাছে ছেড়ে আসে দু’জন। নিজের বাবাকে ঘটনার কথা জানান ওই মহিলা। পরদিন নানুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। অভিযোগ পেলেও পুলিশ ছিল অন্ধকারে। মহিলার বাবার কথায়, আমার মেয়ে হাল ছাড়তে চায়নি। বারবার বলত খাসপুর গ্রামের কাছে চলো। কেতুগ্রামের খাসপুর থেকে গোপালডির দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। বৃহস্পতিবার নাছোড় মেয়ে বাবাকে নিয়ে যান খাসপুরে। সেদিন বিকেলে খাসপুর মোড়ে একটি চায়ের দোকানে জানবক্সকে দেখতে পান নির্যাতিতা। তখনই তাকে ধরে ফেলে মুখোশ খুলে দেন ওই মহিলা। পুলিশ গ্রেপ্তার করে অভিযুক্ত জানবক্সকে। তার বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, ছিনতাই সহ একাধিক ধারায় মামলা করেছে পুলিশ। ধৃতকে শুক্রবার ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় কাটোয়া মহকুমা আদালত। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি তিনজনের পরিচয় জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.