রঞ্জন মহাপাত্র: রান্নার গ্যাস শেষ? বাড়িতে বসে মোবাইলে টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করে সিলিন্ডার বুক করলেন। ডেলিভারি ম্যান বাড়িতে গ্যাসও দিয়ে গেলেন। কখনও হোম ডেলিভারিতে আসা যুবকেরা সিলিন্ডারকে ওভেনের সঙ্গে সংযোগও করিয়ে দিয়ে যান। কিন্তু কখনও সিলিন্ডার বাড়িতে আনার পর তা কখনও মেপে দেখেছেন? দেখলে চোখ কপালে উঠবে। বুঝতে পারবেন কীভাবে বছরের পর বছর ধরে আপনি প্রতারিত হচ্ছেন। সিলিন্ডারের এই জালিয়াতি নিয়ে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এর অন্তর্তদন্ত।
[ডোনা ও সানা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ফেক’ ফেসবুক প্রোফাইল, তদন্তে লালবাজার]
গ্যাস সিলিন্ডারের গায়ে লেখা থাকে ১৪.৫ কেজি। কিন্তু মাপলে দেখবেন সিলিন্ডারে ২–৩ কেজি কিংবা আরও কম থাকতে পারে। অতএব বুকিংয়ে আর চোখ বুজে থাকবেন না। আপনার থেকে পড়ে পাওয়া সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সিলিন্ডার থেকে চলছে দেদার গ্যাস চুরি। তারপর ছোট সিলিন্ডার কোথাও আবার গ্যাস শূন্য বড় সিলিন্ডার ভর্তি করে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। আপনি ঘূণাক্ষরেও টের পাচ্ছেন না। সতর্ক হতে হবে। সিলিন্ডার নেওয়ার সময় মেপে দেখে নিন ওজনে ঠিক রয়েছে কি না। গোটা দেশে এই গ্যাস চুরির চক্র মাথাচাড়া দিয়েছে। গ্রাহকদের এক প্রকার বোকা বানিয়ে দিনের পর দিন গ্যাস চুরি চলছে। ওজনে কম থাকলে তৎক্ষণাৎ গ্যাস সরবরাহকারী এজেন্টের সঙ্গে কথা বলুন। তাতেও কাজ না হলে স্থানীয় থানা কিংবা গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে অভিযোগ জানাতে পারেন। গ্যাস চুরি আটকাতে সতর্ক হতে হবে গ্রাহকদেরই।
[গৌড় এক্সপ্রেসে প্রাক্তন মন্ত্রীর ব্যাগ চুরি, ফের প্রশ্নের মুখে রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা]
প্রশ্ন হল কীভাবে গ্যাস চুরি হয়? সাধারণের বোধগম্যের বাইরে তা। তাই নিজেরা গ্যাসের সিলিন্ডার তুললেও সহজে ওজনের ফারাক থাকতে পারেন না আম আদমি। পুরো প্রক্রিয়ায় বেশ খানিকটা কায়দা কৌশল আছে। সাধারণত সিলিন্ডারের মুখের সিল উপর থেকে টান দিলেই খুলে যায়। তার পরে একটি ছিপি লাগানো থাকে। সেই ছিপিটি খুলে ভর্তি গ্যাস সিলিন্ডারের মুখে পাইপ লাগানো হয়। পাইপের অপর প্রান্তে খালি গ্যাসের সিলিন্ডার লাগানো হলেই, ভরতি গ্যাস সিলিন্ডার থেকে গ্যাস খালি সিলিন্ডারে চলে যায়। কখনও ব্যবহার করা হয় মেশিনও। পাইপের মাধ্যমে গ্যাস চুরিতে জীবনের ঝুঁকি থাকলেও মেশিন লাগিয়ে গ্যাস চুরির ক্ষেত্রে তা থাকে না। এই ছকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বড় বড় গ্যাসের গোডাউনে মেশিন লাগিয়ে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস চুরি করা হয়। পটাশপুর, খেজুড়ি, ভগবানপুর, এগরা এলাকায় এই চক্র সক্রিয় হয়েছে। বাজারে ৫, ১০ কেজি গ্যাসের ওভেন পাওয়া যায়। যার নিচের অংশ সিলিন্ডার এবং উপরের অংশ ওভেন। মেস থেকে শুরু করে পড়ুয়াদের মধ্যে এই ধরনের ক্লিক গ্যাস বেশ জনপ্রিয়। সস্তায় ও কাগজপত্রের ঝুঁকি এড়িয়ে এই গ্যাসের উপর ভরসা করে থাকেন বহু যুবক। এই ওভেনগুলি কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি গ্যাস কোম্পানিগুলি গ্যাস ভর্তি করে না। বাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহৃত সিলিন্ডার থেকে গ্যাস নিয়ে ছোট্ট ওভেনে গ্যাস ভরতি করা হয়। ছোট্ট গ্যাস সিলিন্ডার ভরতি করতে যদিও ওজন পিছু সরকারি দামের দ্বিগুন টাকা নেওয়া হয়। কাঁথি, দিঘা, রামনগর এলাকায় ব্যাপক হারে চলছে গ্যাস চুরির কারবার।
[অশালীন মন্তব্য লেখার অভিযোগ, ৮৮ ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে শাস্তি স্কুলের]
গ্রাহকর এই সমস্যা মেটাতে ও গ্যাস চুরি রুখতে নতুন ধরনের স্বচ্ছ সিলিন্ডার আনার কথা ভাবছে কেন্দ্র সরকার। ইতিমধ্যে তেলেঙ্গানার কিছু এলাকায় এমন সিলিন্ডার বণ্টন শুরু হয়েছে। এই সিলিন্ডারগুলি হবে স্বচ্ছ নীল রঙের। সিলিন্ডারে কতটা গ্যাস রয়েছে তা বাইরে থেকে দেখা যাবে। ফলে গ্যাস নেওয়ার সময় গ্রহকরা সহজেই পরিমাণ বুঝে যাবেন। কতটা গ্যাস খরচ হল তাও দেখা যাবে। এক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা রয়েছে। সাধারণ মেটাল সিলিন্ডারের তুলনায় এর দাম পড়বে দ্বিগুনেরও বেশি। সাধারণ সিলিন্ডারের দাম যেখানে ১৪০০ টাকার আশেপাশে থাকে, সেখানে এই ধরনের স্বচ্ছ সিলিন্ডারের দাম পড়বে কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা। ফলে, এই বাড়তি টাকা গ্রাহকরা দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.