দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: দুর্গাপুজোর পরপর। চার বন্ধু আলের ধারে বসে গল্পে মেতে। দৌড়ে আসছে এক ছায়ামূর্তি। হুবহু সৌমেনের মতো অবয়ব। সামনে আসতেই উধাও। হনহনিয়ে কখনও মাঠ পেরিয়ে চলেছে। চোখের দিকে তাকালেই বুক শূন্য হয়ে যাবে। ঝাপসা, ঘোলাটে চোখ। কখনও আবার শ্মশানের পাশ দিয়ে হেঁটে চলেছে লোকালয়ের দিকে। নিশুত রাতে এর তার বাড়ি গিয়ে নাম ধরে ডেকে উঠছে। বন্ধুরা বলছে, অবিকল সেই গলা। মহালয়ার দিন চারেক আগে ঘটনাটা ঘটে। তার পর থেকে আজ পর্যন্ত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি গ্রামের লোক। তাদের অভিযোগ, ‘উপদ্রব’ রীতিমতো প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাজারে একগুচ্ছ ধার সৌমেন মণ্ডলের। বিয়ের সম্পর্ক হয়েও ভেঙে যায়। অনেকের কাছে হাত পেতেছিল। কারও সাহায্য সে পায়নি। অপমানে, হতাশায় গলায় দড়ি দেয়। বাড়ির তেঁতুল গাছটা এখনও সে চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে।
সেই থেকে প্রবল আতঙ্কে জীবনতলার কালীতলা। সেখানে বাগানপাড়ায় সৌমেনের বাড়ি। সে বাড়ির ধারে কাছে যাওয়া দূরে থাক। ভয়ে মানুষ জড়োসড়ো। ওঝা-গুনিনও ঘায়েল। লাটে উঠেছে দৈনন্দিন কাজ। সন্ধ্যা নামলেই এলাকা জনশূন্য হয়ে যাচ্ছে। মানুষের চলাচল থেমে যাচ্ছে সন্ধ্যার মধ্যেই। বাজারহাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দুপুর পেরোলেই। নমো নমো করে দুর্গাপুজো করা গেলেও, কালীপুজো বন্ধ রাখতে হয়েছে ভূতের ভয়ে।
কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে সত্যি কি এমন ঘটনা ঘটছে? সত্যি কি এ কোনও ক্ষতিকর আত্মার কাজ? সত্যিই কি সে আত্মা সৌমেনের? গ্রামের মানুষের দাবি অন্তত তেমনই। স্থানীয় যুবক মিঠুন অধিকারীর কথায়, “এ কাজ যে সৌমেনেরই তার পরিচয় আমরা পেয়েছি ভূত চতুর্দশীর রাতে। সেদিন অত্যাচার সবচেয়ে বেশি হয়েছিল। প্রায় সব বাড়িতেই কোনও না কোনও চিহ্ন রেখে গিয়েছে তার আত্মা।” আর নাম ধরে ডাকাডাকির ঘটনাটা? সৌমেনের এক বন্ধু বলছেন, “আলবাত ডাকছে। সৌমেনের গলা আমরা চিনব না? বিশেষ করে যাদের সঙ্গে বেশি মেলামেশা করত তাদের বেশি ডাকছে। এমনকী, তাদের বাড়ি গিয়েও হাজির হচ্ছে।” স্থানীয় থানার পক্ষ থেকে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে ঘোর আপত্তি তোলা হয়েছে। তাদের বক্তব্য, কেউ কোনওভাবে এ নিয়ে গুজব রটাচ্ছে। প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। কিন্তু সেই আলের ধারের ঘটনাটা? সৌমেনের সেই বন্ধু মিঠুনও সেদিন ছিলেন অকুস্থলে। বললেন, “আমরা সবাই আলের পাশে রাস্তার ধারে বসেছিলাম দুর্গাপুজোর পর। হঠাৎ দেখি ধানের মধ্যে জমির আল ধরে সন্ধ্যাবেলা কে ছুটে আসছে। কিছুটা আসতেই মুখটা পরিষ্কার হল। সৌমেন। সেই যেভাবে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছিল তেঁতুল গাছে। সেই মুখ। আরও কাছে আসতেই বিলীন হয়ে গেল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.