অমিতলাল সিং দেও, মানবাজার: মায়ের চরণে ভক্তি ভরে প্রার্থনা করলেই মনস্কামনা পূরণ হয়। তাই বিগত ৬০ বছর ধরে এই মন্দিরের দুর্গা প্রতিমার খরচ দিয়ে আসছেন কোনও না কোনও মানতকারী। সেই মানত থেকেই পশু বলির তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। আর তাই ফি বছর
মহানবমীতে দুর্গার নামে উৎসর্গ করে বলি দেওয়া হয় পাঁচ শতাধিক প্রাণী। যার মধ্যে রয়েছে ছাগল, মেষ এমনকি মহিষও। ফলে রক্তের বন্যা বয়ে যায় পুরুলিয়ার মানবাজার ব্লকের প্রাচীন খাটচিরি উপর পাড়ার সর্বজনীন মন্দিরের উঠোনে।
পুজো কমিটির সম্পাদক কঙ্কবিহারী মাহাতো বলেন, “এই মন্দিরে মায়ের কাছে মানত করলে তা পূরণ হয়। সেই কারণেই এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকেও ভক্তরা মানত পূরণ করতে আসেন। আর তার ফলেই বলিদানের তালিকা প্রতি বছর বেড়েই চলেছে।” এখানে প্রধান বলিদানকারী একজন থাকলেও সহযোগী প্রায় ৫ থেকে ৬ জন। ফলে ১৫ টি টাঙি রাখা হয় বলিদানের জন্য। আর সেই সমস্ত ধারালো অস্ত্র বারংবার শান দেওয়ার জন্য মন্দিরের পাশেই অস্থায়ী ভাবে বসানো হয় কামার শাল।
কীভাবে এই পুজোর (Gramer Durga Puja) সূচনা?
সভাপতি কঙ্কবিহারী মাহাতো এবং সম্পাদক বীরবল মাহাতো বলেন, আনুমানিক ৩০০ বছর পূর্বে এই পুজোর সূচনা করেন তাঁদেরই বংশধর হরিহর দীগার। তৎকালীন মানবাজারের রাজার খাজনা আদায়ের দায়িত্ব ছিল হরিহরের উপর। হরিহরের আদি বাড়ি ছিল পুঞ্চায়। ওই পারিবারিক পুজো এখন অবশ্য সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। কথিত আছে, কোনও এক দিন জঙ্গলে গিয়ে বাঘের হামলায় মৃত্যু হয় রাজার একটি গাভীর। আর তার পরেই সেই বাঘকে খুঁজে বের করে খতম করে দেওয়ার নির্দেশ বর্তায় ওই হরিহরের উপর। কিন্তু কয়েকদিন ওই অঞ্চলের বিভিন্ন জঙ্গলে ঘুরেও আর সেই বাঘের দেখা মেলেনি। তবে পরে জঙ্গলের মধ্যে বুড়ির বেশে সাক্ষাৎ দুর্গা নাকি হরিহর দীগারকে সেই বাঘটিকে খুঁজে দিতে পথ বাতলে দিয়েছিলেন। শেষ মেষ সেই বাঘটিকে খুঁজে ‘হত্যা’ করেন হরিহর। খুশি হয়ে রাজা হরিহরকে হরিহরপুর মৌজা উপহার দেন। আর সেই থেকেই দেবী দুর্গার পুজো শুরু করেন তিনি।
জঙ্গলের ডাল,পাতা দিয়ে মণ্ডপ বানিয়ে ঘট পুজো দিয়েই সূচনা হয় এই পুজোর। পরে তৈরি হয় খড়ের ছাউনি দিয়ে মাটির মন্দির। সেই থেকে ধীরে ধীরে এই মন্দিরের উপর আস্থা বাড়ে স্থানীয় মানুষজনের। পরে তৈরি হয় পাকা দালান। তবে রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে আর্থিক অনুদান পায় পারিবারিক থেকে সর্বজনীন হওয়া এই পুজো। বর্তমানে পুরনো মন্দির ভেঙে নব রূপে নির্মিত হয়েছে সুবিশাল মন্দির। পুরুলিয়া জেলা ছাড়াও বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম,মেদিনীপুর থেকে মানুষজন এখানে পুজো দেখতে এবং মানত করতে আসেন। আসেন পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার মানুষজনও। তাই বিশ্বাস ও ভক্তিতে পুজোয় বলিদানে জেলার শীর্ষে এই খাটচিরি উপর পাড়া সর্বজনীন মন্দির।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.