স্টাফ রিপোর্টার শিলিগুড়ি ও নিজস্ব সংবাদদাতা মালবাজার: উড়ল গেরুয়া আবির। বাঁধ ভাঙল উচ্ছ্বাসের। গজলডোবার ‘ট্যুরিস্ট হাব’ ভোরের আলোর হেলিপ্যাডের জন্য রাজ্যের চিহ্নিত জমিতে অনিচ্ছুক কৃষকরা ফের চাষ আবাদের কাজ শুরু করে সোমবার অকাল হোলিতে মাতলেন।
কয়েকদিন ধরেই জমি ফেরতের দাবিতে আন্দোলন সংগঠিত করেন কৃষকরা। সরকারি সাইনবোর্ড তুলে ফেলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বার কয়েক ধস্তাধস্তিও হয়। পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে যে অনেকেই সিঙ্গুরের ছায়া দেখতে শুরু করেন। ৭ জুন পর্যটনমন্ত্রী এলাকায় গেলে ক্ষুব্ধ কৃষকরা কালো পতাকা দেখিয়ে ‘গো ব্যাক’ ধ্বনিতে সরব হন। এরপরই শনিবার প্রশাসনের তরফে সাইনবোর্ড সরিয়ে নেওয়া হয়। কার্যত ওই দিন থেকেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন কৃষকেরা। এদিন সকালে চাষিরা ট্রাক্টর নিয়ে চাষ শুরু করে। এদিন কৃষকদের সঙ্গে মিলনপল্লিতে চাষের জমিতে হাজির ছিলেন বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য সহ-সভাপতি শিখা চট্টোপাধ্যায়, কিষাণ মোর্চার জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি নবেন্দু সরকার, মহিলা মোর্চার জেলা সম্পাদিকা মায়া দাস রায়, গজলডোবা মিলনপল্লি ভূমিরক্ষা কমিটির সভাপতি নকুল দাস, বিজেপির রাজগঞ্জ উত্তর মণ্ডলের সম্পাদক উত্তম রায় প্রমূখ।
গজলডোবা মিলনপল্লি ভূমিরক্ষা কমিটির সভাপতি বলেন, “এটা আমাদের নৈতিক জয়। রাজ্য সরকার আলোচনা ছাড়াই একরকম গায়ের জোরে কৃষকদের উৎখাত করে জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করছিল। সেটা রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।” সোমবার কৃষকরা দলবেঁধে জমিতে চাষ করতে নামেন। চলে হোলি খেলাও। ‘ভোরের আলো’ ট্যুরিস্ট হাব গড়ে তুলতে রাজ্য ইতিমধ্যে ২১০ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে। সম্প্রতি পর্যটন দপ্তর গজলডোবা থেকে কিছুটা দূরে বোদাগঞ্জের মিলনপল্লিতে প্রকল্পের জন্য একটি হেলিপ্যাড, আবাসন ও সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের প্রয়োজনে ২৫ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করে। রাজগঞ্জ ব্লকে জঙ্গল মহল মৌজার ৩৭-৩৮ নম্বর দাগে জমি অধিগ্রহণের জন্য মাপা শুরু হয়। এরপর অধিগ্রহণের বোর্ড লাগাতেই শুরু হয় বিক্ষোভ। কৃষকদের অভিযোগ, ‘‘জমিতে ফসল রয়েছে। বাদাম, কচু চাষ হয় এখানে। অথচ পুলিশ মাঠে যেতে দিচ্ছে না।’’
কৃষকদের দাবি, বাম আমলে ওই জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছিল। অথচ সরকার তাঁদের অন্ধকারে রেখে জমি অধিগ্রহণ করতে চাইছে। কৃষকরা সরকারি বোর্ড উপড়ে ফেলার চেষ্টা করতেই শুরু হয় সংঘর্ষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, পর্যটনমন্ত্রী ও জেলাশাসক কৃষকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। কৃষকরা জানিয়ে দেন, সরকারি ভাবে চিঠি দিয়ে না ডাকলে কেউ বৈঠকে যাবেন না। এরপর পর্যটনমন্ত্রী গজলডোবায় গেলে কৃষকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। অবশেষে শনিবার প্রশাসন জমি অধিগ্রহণের বোর্ড অন্যত্র সরিয়ে নিলে স্বস্তি ফেরে। সোমবার থেকে ফের জমিতে চাষ শুরু করায়় খুশি কৃষকরা। খুশিতে তাঁরা গেরুয়া আবিরে হোলি খেলেন। যদিও এদিনের ঘটনা নিয়ে প্রশাসনের কর্তারা মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.