শেখর চন্দ্র, আসানসোল: অনুব্রত মণ্ডলের সিবিআই হেফাজতের শেষদিন ছিল বুধবারই। আইনি হিসেবনিকেশ অনুযায়ী ১৪ দিন পর আর তৃণমূল নেতাকে গরু পাচার মামলায় নিজেদের হেফাজতে নিতে পারত না কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তবে তাঁর জেল হেফাজতের সম্ভাবনা ছিল প্রায় একশো শতাংশ। তবে তার আগে আদালতে যেকোনও শর্তে জামিনের আবেদন জানান বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির আইনজীবী। প্রয়োজনে নিজাম প্যালেসের আশেপাশে কোথাও থাকারও কথা বলেন। যদিও কিছুই ধোপে টেকেনি। বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর নির্দেশ অনুযায়ী ফের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে অনুব্রত।
শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আরও একবার যেকোনও শর্তে অনুব্রতর (Anubrata Mandal) জামিনের আবেদন জানান আইনজীবী। বিচারককে তিনি বলেন, “অনুব্রত মণ্ডল শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাঁকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানোর সুযোগ দেওয়া হোক। অনুব্রতর যেকোনও মুহূর্তে অক্সিজেন প্রয়োজন হতে পারে। জামিন পাওয়ার পর প্রয়োজনে তিনি বীরভূমে যাবেন না। নিজাম প্যালেসের আশেপাশে কোনও বাড়িতে থাকবেন।” বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী বলে ওঠেন, “আবার বাড়ি?” এজলাসে ওঠে হাসির রোল। এরপর বিচারক তৃণমূল নেতার শারীরিক সমস্যার কথা মাথায় রেখে ইনহেলার দেওয়ার নির্দেশ দেন।
গত ১১ আগস্ট বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়ি থেকে গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হন অনুব্রত মণ্ডল। সিবিআই সূত্রে খবর, তারপর একের পর এক সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। তৃণমূল নেতার প্রয়াত স্ত্রী এবং মেয়ের নামে প্রায় ১৭ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিটের কথা জানা গিয়েছে। সিবিআইয়ের নজরে রয়েছে বোলপুরের কমপক্ষে ১০টি রাইস মিল। ইতিমধ্যেই ভোলে ব্যোম ও শিব শম্ভু রাইস মিলে একপ্রস্থ তল্লাশিও চালান আধিকারিকরা। ভোলে ব্যোম থেকে মিলেছে একটি মোটর বাইক-সহ ৬টি গাড়ি। শিব শম্ভু রাইস মিল থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপণ নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অনুব্রতর আয়ের উৎস এখনও অজানা। তারই মাঝে ফের নিজাম প্যালেসের পাশে কোনও বাড়িতে অনুব্রত মণ্ডলের থাকার প্রস্তাব শুনে এজলাসে ওঠে হাসির রোল।
এরপর বিচারকের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি চান অনুব্রত। হাতজোড় করে তিনি বলেন, “হুমকি চিঠি কে দিল, তার সিবিআই তদন্ত হোক।” প্রয়োজনে নিজেই মামলার পার্টি হওয়ার আবেদনও জানান। বিচারক বলেন, “এই মামলার সঙ্গে হুমকির কোনও সম্পর্ক নেই। তাই কেউ এ বিষয়ে কথা বলবেন না।” উল্লেখ্য, মঙ্গলবার আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী হুমকি চিঠি পান। অনুব্রতকে জামিন না দিলে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে প্রেরক হিসাবে বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ ছিল। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত চেয়ে আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনারকে চিঠি পাঠিয়েছেন বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী। এরপর বুধবার আসানসোল দক্ষিণ থানাতেও অভিযোগও দায়ের করেন বিচারক। অভিযুক্তকে জেরা করছে পুলিশ। ওই চিঠিতে সই জাল করা হয়েছে বলেই দাবি অভিযুক্তের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.