সাগরতটে দেবতোষের সৃষ্টি করা বালুশিল্প।
সুরজিৎ দেব: মনখারাপ গঙ্গাসাগরের বালুশিল্পীর। তাঁর শিল্পসৃষ্টিতে বাধ সেধেছে বঙ্গোপসাগর। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের ধাক্কায় সাগরতট প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসায় অভাব স্থান সঙ্কুলানের। জোয়ারের জলে তাই ভাটা পড়েছে শিল্পীর শিল্পকর্মেও। বিগত কয়েকটা বছরে একটু একটু করে সমুদ্র গ্রাস করেছে সাগরের বেলাভূমি। সমুদ্র তট ভাঙতে ভাঙতে কপিলমুনির মন্দির থেকে আর মাত্র কয়েকশো মিটার দূর দিয়ে বইছে সমুদ্রের অসীম জলরাশি। অথচ অযত্নে অবহেলায় তটে পড়ে থাকা বালুকণা এই সেদিনও কী জীবন্ত হয়ে উঠত শিল্পীর নিখুঁত হাতের ছোঁয়ায়! গঙ্গাসাগরের বাসিন্দা বালুশিল্পী দেবতোষ দাস। রাশি রাশি বালুকণা দিয়ে সমুদ্রতটে সৃষ্টি করেছেন কতই না শিল্প! বালি দিয়ে সাগরসৈকতে গড়েছেন একের পর এক দেবীমূর্তি। বালিতে অবিকল রূপ দিয়েছেন রাজ্য সরকার ঘোষিত নানা প্রকল্পচিত্র। সময়ে অসময়ে ছুটে গিয়েছেন সমুদ্রতটে শিল্পসৃষ্টির নেশায়।
শিল্পীর কথায়, ‘‘বালি দিয়ে কত কী-ই না সৃষ্টি করেছি। যেন এক নেশায় পেয়ে বসেছিল। গঙ্গাসাগরে তীর্থে আসা পুণ্যার্থী আর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কত প্রশংসা কুড়িয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং আমার হাতের কাজ দেখে আমাকে পুরস্কৃত করেছিলেন। কিন্তু সে সবই আজ অতীত। এখন আর কাজের জায়গা নেই। সমুদ্র গিলেছে সাগরতটের বিস্তীর্ণ এলাকা। সেসময়ের শিল্পকর্মের কয়েকটা ছবিই আজ কেবল আমার শিল্পীসত্তার প্রমাণমাত্র। আর কোনওদিন সাগরের সৈকতে বালুশিল্পের নতুন নতুন সৃষ্টি করতে পারব না বুঝেই মনটা মাঝে মাঝে ভীষণ খারাপ হয়ে যায়।’’
শিল্পী দেবতোষ জানিয়েছেন, সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী তথা সাগরের বিধায়ক বঙ্কিমচন্দ্র হাজরার কাছে আবেদন জানাবেন যাতে স্নানঘাটে যাওয়ার রাস্তায় ফাঁকা জায়গার উপর তাঁর বালির শিল্পসৃষ্টির অনুমতি দেওয়া যায়। অনুমতি পেলে সমুদ্রের বালি সংগ্রহ করে সেখানে বয়ে নিয়ে গিয়ে আবারও নতুন নতুন শিল্পসৃষ্টিতে মেতে উঠবেন তিনি। অনুমতি না পেলে স্মৃতিগুলোই হবে তাঁর সম্বল। স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকবেন জীবনভর। তবে সাগরদ্বীপের এখানে-ওখানে মাঝেমধ্যে কখনও-সখনও ডাক পড়ে তাঁর। কিছুদিন আগেই সাগর কলেজের মাঠে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ময়দান সজ্জায় ডাক এসেছিল তাঁর।
শিশুমনকে উৎসাহিত করতে সেখানে তৈরি করেছিলেন ‘মোরা ছুটব, মোরা খেলব’ মডেলে বালি দিয়ে তৈরি এক প্রতিকৃতি। যা সবার মন ছুঁয়েছিল। কিন্তু শিল্পীর মন তাতে সায় দেয়নি। সমুদ্রতটের শিল্পসৃষ্টিতে যেন এক আলাদা আনন্দ অনুভব করেন শিল্পী। তিনি বলেন, আসলে সমুদ্রতটে শিল্প গড়ার আনন্দই আলাদা। তাছাড়া সমুদ্র তীরবর্তী দূর-দূরান্ত থেকে রাশি রাশি বালি বয়ে এনে কাজ করা একপ্রকার অসাধ্য। সাগরসৈকতে তাঁর সৃষ্টি করা শিল্পকর্ম দু-একটা দিন থাকত। তারপর সাগরের জলে ধুয়ে যেত সেই কাজ। আবার নতুন নতুন শিল্পসৃষ্টিতে মন দিতেন তিনি। কিন্তু এখন সেই সুযোগও আর নেই। আজ তাই মন ভালো নেই শিল্পী দেবতোষের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.