Advertisement
Advertisement
Higher Secondary

ক্যানসারের সঙ্গে লড়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ, ফল জানার আগেই চিরঘুমের দেশে হুগলির ছাত্রী!

ভাগ্নির মার্কশিট হাতে নিয়ে দু চোখ জলে ভরে এল মামার!

Higher Secondary Result: Chandannagar student died before the result out
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:May 8, 2025 3:09 pm
  • Updated:May 8, 2025 3:12 pm  

সুমন করাতি, হুগলি: মারণরোগের সঙ্গে দীর্ঘদিনের লড়াই। অদম্য জেদের বশে রোজকার সেই কঠিন জীবনের মাঝেই পড়াশোনা করে নিজেকে প্রস্তুত করেছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য। চন্দননগরের সুজলি পাত্র শেষ চারটি পরীক্ষা দিয়েছে হাসপাতাল থেকে। এত কিছুর পরও প্রথম বিভাগে পাশ করেছে সে। কিন্তু নিজের এই সাফল্য জানার আগেই চিরঘুমের দেশে চলে গিয়েছে সুজলি। ৭ মে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। তার ঠিক ১০ দিন আগে, ২৮ এপ্রিল মৃত্যু হয়েছে সুজলির। বুধবার তার মার্কশিট হাতে নিয়ে চোখ জলে ভরে এল মামার। তাঁর কাছেই যে সুজলি বড় হয়েছে।

উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল দেখার আগেই চিরঘুমের দেশে চন্দননগরের সুজলি পাত্র। নিজস্ব ছবি।

চন্দননগর লালবাগান স্কুলের ছাত্রী সুজলি পাত্র মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করেছিল। এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও তার প্রথম বিভাগ অর্থাৎ ৬০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে সে। তবে নিজের এই সাফল্য নিজের উপভোগ করতে পারল না সুজলি। তার আগেই যে তাকে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যেতে হয়েছে অন্য কোথাও, অন্য কোনওখানে! ২০২৩ সালে ক্যানসার ধরা পড়ে সুজলির শরীরে। প্রথমে জরায়ুতে টিউমার, সেখান থেকে ক্যানসারের বিষ ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে অপারেশন, তারপর কেমোথেরাপি নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। স্কুলে বরাবরই ভালো ছাত্রী ছিল সে। পড়াশোনা ছাড়াও স্কুলের সব অনুষ্ঠানে অংশ নিত, তাই দিদিমনিদের প্রিয় ছিল সুজলি পাত্র। মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করেছিল।

Advertisement
সুজলি পাত্রের উচ্চ মাধ্যমিকের অ্যাডমটি কার্ড। নিজস্ব চিত্র।

এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার সময় ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়ে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয় তাকে। এখান থেকেই শেষ চারটি পরীক্ষা দিয়েছিল। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় হুগলি জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক শুভেন্দু গড়াই বলেন, ”ছাত্রীর অসুস্থতার খবর পেয়েই তাকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। এনআরএস হাসপাতাল থেকে যাতে সে পরীক্ষা দিতে পারে, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি হিসেবে কথা বলে তা ঠিক করা হয়। ওই ছাত্রী বেশ মেধাবী ছিল। অনেক কষ্ট করে পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু ভালো রেজাল্ট দেখে যেতে পারল না! খুব খারাপ লাগছে।”

সুজলিকে শুধু ক্যানসারের সঙ্গেই লড়তে হয়েছে, তা কিন্তু নয়। সুজলির যখন মাত্র ১১ দিন বয়স, তখন তার মা মারা যান।সেদিন থেকেই মামা সত্যজিৎ রায়ের কাছে বড় হয়েছে। মণ্ডলপাড়া জুট মিলের শ্রমিক মামা অনেক কষ্ট করে তার ভাগ্নিকে বড় করছিলেন। ক্যানসার ধরা পড়ার পর সুজলির চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন তাঁর সাধ্যমতো। পড়াশোনায় স্কুলের শিক্ষিকারা সুজলিকে অনেক সাহায্য করেছেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কে খণ্ডাতে পারে! কোনওভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাটা সে দিয়েছিল ঠিকই, তারপর আর সুস্থ হতে পারেনি। বুধবার ফলপ্রকাশের পর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অর্পিতা মণ্ডল সত্যজিৎবাবুকে ফোন করে খবর দেন যে সুজলি প্রথম বিভাগে পাশ করেছে। তা শুনে দু চোখ জলে ভিজে যায় মামার। বলেন, ”প্রথম বিভাগে পাশ করেছে ভাগ্নি। কিন্তু দেখে যেতে পারল না।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement