অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: এক তরুণীকে প্রায় দশ দিন ধরে তাঁদের ফ্ল্যাটের একটি ঘরে পায়ে লোহার শিকল বেঁধে তাতে তালা চাবি দিয়ে আটকে রাখা হল। এমনটাই অভিযোগ করলেন ওই তরুণী। কলেজ পড়ুয়া ও চাকরিরত বছর ২০-র ওই তরুণীর অভিযোগ, পড়াশোনা ও চাকরি ছেড়ে দিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে এখনই বিয়ে করতে বলে। সেই বিয়েতে রাজি না হওয়াতেই তাঁকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। শুক্রবার সকালে বিষয়টি নজরে আসায় তরুণীর প্রতিবেশীরা স্থানীয় তৃণমূলের মহিলা নেত্রীকে খবর দেন। তিনি তরুণীর ফ্ল্যাটে গিয়ে থানায় খবর দেন। পুলিশ গিয়ে তরুণীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর হাওড়ার ঘুষুড়িতে। ঘুষুড়ির দয়ারাম নস্কর লেনের ২৬/১ নম্বর ঠিকানার একটি আবাসনের পাঁচ তলার ফ্ল্যাটে থাকেন আরতি সাহু নামে ওই তরুণী। শুক্রবার সকালে আরতিদের ফ্ল্যাটের দরজা যখন খোলা ছিল তখন তাঁদের বাড়িওয়ালা দেখতে পান ওই তরুণীকে ফ্ল্যাটের ঘরের ভিতর পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসতেই ওই ব্যক্তি স্থানীয় ২ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী সন্ধ্যা রায়কে খবর দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ওই তৃণমূল নেত্রী। বিষয়টি দেখে তিনি খবর দেন মালিপাঁচঘড়া থানায়। পুলিশ গিয়ে ওই তরুণীর পায়ের শিকল খুলে তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। আরতি এদিন জানান, তিনি একটি কল সেন্টারে চাকরি করেন।
পাশাপাশি তিনি সাবিত্রী গার্লস কলেজে বি এ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। কিন্তু তাঁর বাবা- মা তাঁকে চাকরি ও পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে এখনই বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতেই তাঁকে পায়ে শিকল বেঁধে শাস্তি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তরুণীর। তরুণীর বক্তব্য, তিনি আরও পড়াশোনা করতে চান। আরও ভালো চাকরি করে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চান। কিন্তু তাঁর বাবা মা এটা তাঁকে করতে দিতে নারাজ। এদিকে এদিন তরুণীকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর বাবা গোরেলাল সাহু ও মা গুড়িয়া দেবীকেও থানায় ডেকে পাঠানো হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাবা, মা ও মেয়েকে মালিপাঁচঘড়া থানায় আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চালায় পুলিশ। তবে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি ওই তরুণী। এই প্রসঙ্গে তরুণীর বাবা গোরেলাল সাহু বলেন, ‘‘আমার মেয়ে খারাপ জায়গায় কাজ করছিলো। বদ সঙ্গে মিশছিলো। আমি ওকে কাজ বন্ধ করতে বলেছিলাম। কিন্তু ও তা করছিল না। প্রায়ই বাইরে বেরিয়ে যেতো। বারণ করলেও শুনতো না। তাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে খারাপ জায়গায় কাজ করতে যাতে না যায়, বদসঙ্গে যাতে না পড়ে সেজন্যই আমরা বাধ্য হয়ে ওর পায়ে শিকল দিয়ে রেখেছিলাম।’’
প্রসঙ্গত, তরুণীর বাবা গোরেলাল একটি কারখানায় কাজ করেন। বাবা, মা ছাড়াও তরুণীর দুই ভাই রয়েছে। এই প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানালেন, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি তরুণী যে কল সেন্টারে কাজ করে সেই কল সেন্টার নিয়ে একবার পুলিশি তদন্ত হয়েছিল। সেই তদন্তের জন্য পুলিশ একবার তরুণীকে তার বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যায়। তার পর থেকেই তরুণীর বাবা কল সেন্টারের চাকরি ছেড়ে দিতে বলে তরুণীকে। তা না ছাড়াতেই তরুণীকে বাড়ি থেকে বেরোতে না দেওয়ার জন্য তাঁর পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.