Advertisement
Advertisement
Howrah

সিঁদুরদান-মালাবদল, হল না শুধু সাত পাক, ক্যানসারে মৃত প্রেমিকাকে বিয়ে যুবকের!

সাগর-মৌলির এমন প্রেম চাক্ষুস করে চোখে জল এলাকাবাসীরও।

Howrah youth marry his 'dead' girlfriend
Published by: Sayani Sen
  • Posted:May 5, 2025 9:24 am
  • Updated:May 5, 2025 9:24 am  

অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: সিনেমা নয়, তবে ঠিক যেন সিনেমার মতো। দীর্ঘ ৮ বছরের প্রেম। ঠিক করেছিলেন, একে অপরের অবলম্বনে কাটিয়ে দেবেন গোটা জীবনটা। সেইমতো দুজনই মনে মনে বিয়ের স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন। কিন্তু, বিধি বাম। মারণ রোগ ক্যানসার যে তলে তলে কখন থাবা বসিয়েছে প্রেমিকার শরীরে, তা ঠাহরই করে উঠতে পারেননি প্রেমিক-যুবক। যখন জানতে পারলেন, তখন সময় পেরিয়ে গিয়েছে বেশ খানিকটা। তা সত্ত্বেও চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর এক বুক আশা নিয়ে বসেছিলেন দু’বাড়ির সকলেই। ঠিক ছিল, সামনের অগ্রহায়ণেই চারহাত এক করে দেওয়া হবে। কিন্তু, তার আগেই ঘটে গেল অঘটন। অসময়ে চিরঘুমের দেশে চলে গেলেন প্রেমিকা। অধরা স্বপ্নকে শেষবারের মতো ছুঁয়ে দেখতে প্রেমিকার মৃতদেহেই সিঁদুর পরিয়ে বিয়ে করলেন শোকাহত প্রেমিক। আর, চোখে জল নিয়েই বউদির মুখাগ্নি করলেন মৃতার দেওর।

ঘটনাটি হাওড়ার সাঁকরাইলের মানিকপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চার বাম্পার এলাকার। এলাকার মৌলি মণ্ডলের (২৪) সঙ্গে প্রায় ৮ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল সাঁকরাইলের হাওয়াপোতা এলাকার বাসিন্দা সাগর বারিকের। দুই পরিবারের পক্ষ থেকেই চলছিল চারহাত এক করার প্রস্তুতি। এর মধ্যেই ২০২৩ সালে মৌলির স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। একাধিক কেমো দেওয়ার পর ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে একটি অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক। তারপর রেডিওথেরাপি প্রয়োগ করার পর ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে উঠছিলেন মৌলি। এরপর দুই পরিবার থেকেই ঠিক হয়, অগ্রহায়ণেই দুজনের বিয়ে দেওয়া হবে। সেইমতো তোড়জোড়ও শুরু হয়। দিনকয়েক আগে আচমকাই চিকেন পক্সে আক্রান্ত হন মৌলি। তারপর থেকেই তাঁর অবস্থার ক্রমশ অবনতি হয়। চিকিৎসাতেও সাড়া দেননি। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে লড়াই থামে মৌলির।

Advertisement

খবর পেয়ে রাতেই প্রেমিকার বাড়িতে ছুটে যান সাগর। শোকে স্থবির হয়ে গেলেও মুহূর্তের সিদ্ধান্তে প্রেমিকাকে বেনারসি শাড়ি পরিয়ে, গোলাপের মালাবদল করে বিয়ে করেন সাগর। সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন। তারপর নিয়মমতো শুক্রবার সকালে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেখানে বধূবরণের যাবতীয় আচার পালন করেন সাগর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তেল হলুদ, কনে কাচুলি, চাল-আলু দিয়ে বধূবরণের যাবতীয় রীতি মেনে সাগর মৌলিকে ঘরে তোলেন। এরপর মৌলিকে বাড়ির বউয়ের মর্যাদা দিয়ে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন সাগরের পরিবারের সদস্যরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় সাগরের ভাই বিশাল বারিক মৌলিকে বউদির মর্যাদা দিয়ে মুখাগ্নি করেন।

শোকে বাকরুদ্ধ সাগরের মা চাঁপা বারিক ছলছল চোখে বললেন, “আগামী অগ্রহায়ণে ওদের বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। মৌলির জন্য বেনারসি শাড়িও কিনে রেখেছিলাম। সেই শাড়ি পরিয়েই আজ ওকে বিদায় দিলাম।” প্রেমিকার মৃত মুখে শেষবারের মতো আদর করে সাগর বললেন, “ওর ভালোবাসার স্মৃতি নিয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই। ওর অনেক স্বপ্ন ছিল। রজনীগন্ধা নয়, গোলাপের মালা দিয়ে আমাদের মালাবদল হবে। ওর মৃত্যুর পরও আমি স্বপ্নকে বিফলে যেতে দিইনি। মায়ের কেনা বেনারসি শাড়ি ও গোলাপের মালা দিয়ে মালাবদল করেছি। ও যেরকমভাবে বিয়ে করতে চেয়েছিল ওর সেই স্বপ্নকেই সফল করার চেষ্টা করেছি। আশা করি ওর আত্মা এতে শান্তি পাবে।” সাগর-মৌলির এমন প্রেম চাক্ষুস করে চোখে জল এলাকাবাসীরও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement