চন্দ্রজিৎ মজুমদার, কান্দি: কীর্তিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নগরের বাড়িতে খবর পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার। আর ফোনের ওপার থেকে শোনা যাবে না ছেলের গলার স্বর। শেষবারের মতো কফিনবন্দি হয়েই বাড়ি ফিরছেন তিনি। শনিবার সকালে মণিপুরের জঙ্গি হানা (Manipur Attack) কেড়ে নিয়েছে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) কান্দি মহকুমার খড়গ্রাম ব্লকের কীর্তিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নগর গ্রামের শ্যামল দাসের প্রাণ। গতকাল রাতেই তাঁর বাড়িতে দুঃসংবাদ এসে পৌঁছয়। তারপর থেকেই গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমেছে।
মণিপুরে জঙ্গি হামলায় প্রাণ গিয়েছে সেনাকর্তা-সহ মোট সাতজনের। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে জওয়ানদের প্রাণত্যাগ ব্যর্থ যাবে না বলে হুঙ্কার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সুবিচারের অপেক্ষায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আর সেই ঘটনাই মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিল একটা তরতাজা প্রাণ।
আজ, রবিবার শহিদ শ্যামল দাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় চারিদিকে শুধুই কান্নার রোল। স্বামীর দু’দিন আগেকার ফোনের বার্তালাপ বারবার মনে পড়ছে শহিদের স্ত্রী রূপা দাসের। ভিজে চোখে বলেন, দু’দিন আগেই একমাত্র মেয়ে দিয়া দাসের জন্মদিন ছিল। মেয়েকে হ্যাপি বার্থডে জানিয়ে শেষ ফোন করেছিল ওর বাবা। জানিয়েছিল খুব শিগগির জন্মদিনের উপহার নিয়ে ফিরবে। কিন্তু শনিবার রাতেই সব শেষ হয়ে গেল।
শ্যামল দাসের পিতা ধীরেন দাসের কথায়, “আমরা খুবই দুস্থ পরিবারের। আমার দুই ছেলে। ছোট ছেলে কিছুদিন আগেই মারা গিয়েছে। বড় ছেলে দেশরক্ষায় অসম রাইফেল কর্মরত ছিল মণিপুরে। ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে বড় ছেলে শ্যামল যোগ দেন অসম রাইফেলসে। ছেলের লক্ষ্য ছিল অনেক বড় মানুষ হওয়া। জঙ্গিদের সঙ্গে বহুবার মোকাবিলা হয়েছে। যখনই বাড়ি আসত, তখনই সে সব গল্প শোনাত। কিন্তু এবার ওই জঙ্গিদের হাতে সব শেষ হয়ে গেল। তবে ছেলের এই মৃত্যুতে আমি শোকাহত নই। কারণ আমি মনে করি আমার ছেলে শহীদ হয়েছে। আর শহিদের প্রাণ সকলের ঊর্ধ্বে। জঙ্গিরা কাপুরুষ।” এরপরই যোগ করেন, “সরকারকে অনুরোধ করছি যেন ওদের খুঁজে বের করে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।”
এদিন সকাল থেকেই শহিদ শ্যামল দাসের বাড়িতে কাতারে কাতারে গ্রামবাসী ভিড় জমিয়েছেন সমবেদনা জানাতে। সকলকে ধরে ধরে শহিদের মা শুনিয়েছেন ছেলের রেখে যাওয়া স্মৃতির কথা। জানিয়েছেন, পুজোর আগে ছেলে বাড়ি এসেছিলেন। দুর্গাপুজোর পঞ্চমীতে কর্মস্থলে ফিরে যান। তখন বলে গিয়েছিলেন, অগ্রহায়ণ মাসে নবান্ন উৎসবে অবশ্যই ফিরবেন গ্রামে। কিন্তু তার আগেই ছেলের শহিদ হওয়ার খবর এসে পৌঁছল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.