ছবি - প্রতীকী
অভিরূপ দাস: পান থেকে চুন খসলেই তাঁদের কলার ধরেন রোগীর পরিবার। কপালে হয় জোটে বেদম প্রহার নয়তো অশ্রাব্য গালিগালাজ। করোনা (Corona Virus) আবহেও তাতে ছেদ পরেনি। এই সেদিনও পাঁশকুড়ার কোভিড (COVID-19) হাসপাতালে লোহার রডের বাড়ি খেয়েছেন কেউ কেউ। রাজ্যের সেই জুনিয়র ডাক্তাররাই (Junior doctors) এবার জোট বাঁধলেন। প্রতিবাদ করতে নয়। করোনা রোগীদের বাঁচাতে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ (Corona Second Wave) নিয়ে এসেছে ভয়ংকর বিপর্যয়। এদিকে বাংলা জুড়ে জারি হয়েছে কড়া বিধিনিষেধ। বন্ধ হয়েছে গণ পরিবহন। এমতাবস্থায় করোনা আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের চেম্বারে যাওয়ার উপায় থাকে না অনেকের পক্ষে। অনেক জায়গায় সংক্রমণের কারণে বন্ধও রয়েছে ডাক্তারের চেম্বার। চিকিৎসা না পেয়ে বাড়িতেই মৃত্যুর খবর ভেসে আসছে রাজ্যের নানান জায়গা থেকে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের পিজিটি ডা. সৌম্যদীপ ঘোষের কথায়, “আমরা চাই না চিকিৎসা না পেয়ে একজনও মারা যাক। হোম আইসোলেশনে থাকা করোনা আক্রান্তদের জন্য বিনামূল্যে টেলিমেডিসিনের পরিষেবা চালু করেছি আমরা৷”
করোনার জন্য পিছিয়ে গিয়েছে NEET-PG পরীক্ষা। পড়ার চাপ তেমন নেই? তবে অতিমারী পরিস্থিতির মানসির চাপ রয়েছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করা শিলাদিত্য দেবাস্বীর কথায়, “সেই চাপের সঙ্গেই রয়েছে মানসিক যন্ত্রণা। এ যাবৎ করোনায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে । কাজ হারিয়েছেন কোটি কোটি মানুষ । করোনার প্রভাবে ব্যাপকভাবে ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন বাংলার মানুষ । এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। সকলকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পৌঁছে দিতে চাই আমরা।”
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তার, পিজিটিদের তরফে করোনার টেলিমেডিসিনের পরিষেবা চালু করা হল । এর জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ৫৮ জন চিকিৎসককে নিয়ে টেলিমেডিসিন টিম গঠন করা হয়েছে । টিমের দাবি, বহুদিন থেকেই এই টেলিমেডিসিন-এর পরিষেবা চালু হয়ে গিয়েছে । এ রাজ্যের নানান প্রান্ত থেকে তো বটেই চিকিৎসা চেয়ে ফোন এসছে সুদূর কাশ্মীর থেকেও। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের মাধুর্য চক্রবর্তীর বক্তব্য, “করোনায় আক্রান্ত যে সব মানুষ হোম আইসোলেশনে রয়েছেন তাঁদের জন্যেই বিনামূল্যে আমাদের এই পরিষেবা। ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে এই পরিষেবা।”
বছরভর এঁরাই রোগীর পরিবারের হাতে আক্রান্ত হন। করোনা আবহেও ভাঙচুর হচ্ছে একাধিক হাসপাতাল। এই আবহেও ডা. সৌরভ দাস, ডা. সুদেব রঞ্জন পাড়িয়া, ডা. শুভজিৎ দাসরা একজোট হয়েছেন। দাদাদের সঙ্গে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে নেমেছেন মেডিক্যাল পড়ুয়ারাও। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অর্কদীপ মুখোপাধ্যায়, বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের অভিরব সাহা, আইপিজিএমইআর এর হৃষিতা চট্টোপাধ্যায়, মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্ন সৃজন দাসের একটাই প্রার্থনা, “এরপরে রোগী মারা গেলে আমাদের গায়ে হাত তুলবেন না। কোনও চিকিৎসকই চায় না কেউ মারা যাক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.