সৌরভ মাজি, কালনা: মানবিকতার নজির গড়লেন কালনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রক্তের অভাবে মরতে বসেছিলেন এক প্রসূতি। রক্ত জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন পরিবারের সদস্যরাও। শেষপর্যন্ত সেই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াল হাসপাতাল কালনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দিনভর মাইকে প্রচার করে একদিকে যেমন চলল রক্তদাতা জোগারের চেষ্টা, তেমনই আবার হাসপাতালের কর্মীরা নিজেই রক্তদান করে প্রাণ বাঁচালেন প্রসূতির।
শুক্রবার রাতে কালনার বৈদ্যিপুরের বাসিন্দা রেণুকা সরেন সন্তান প্রসব করেন। সন্তান প্রসবের পর থেকে রক্ত সংকটে ভুগছিলেন তিনি। হাসপাতালের ব্লাডব্যাংকেও অমিল ছিল প্রয়োজনীয় এবি পজেটিভ গ্রুপের রক্ত। পরিবারে লোকজনদের বারবার বলা হলেও রক্ত জোগাড় করে উঠতে পারেননি রোগীর পরিবারের লোকেরা। তার পরেই হাসপাতালের তরফেই রক্ত জোগাড় করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। শনিবার সকাল থেকেই রক্তের খোঁজে শুরু হয় মাইকিং। সেই মাইকিং শুনেই এগিয়ে আসেন হাসপাতালেরই ‘মাতৃযান’ অ্যাম্বুল্যান্স চালক। হাসপাতালে আসা অন্য রোগীর পরিবারের লোকেরা এগিয়ে আসেন রক্ত দিতে। সকলে সম্মিলিত চেষ্টায় হাসি ফোটে রেণুকা সরেনের পরিবারে লোকের মুখে। জানা গিয়েছে, শনিবার সকাল থেকেই রক্তের খোঁজ করা হচ্ছিল। সকাল ৮টায় রোগীর পরিবারকে জানানো হয়েছিল। সকাল ১০টার পরও তাঁরা রক্তের ব্যবস্থা করতে পারেনি। তারপরেই হাসপাতালের লাগানো সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে রক্ত দিতে আহ্বান করা হয় হাসপাতালের আসা লোকজনদের উদ্দেশ্যে। তখন হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স চালক অনুপ দেবনাথ রক্ত দিতে এগিয়ে যান।
[‘গোয়েন্দা’ ভাইয়ের জন্য পাত্রী দেখতে গিয়ে গ্রেপ্তার ‘ইঞ্জিনিয়ার’ দাদা]
তিনি বলেন, “আমরা সব সময়ই মানুষের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করি। যা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।” হাসপাতালের নানা কর্মী এগিয়ে আসলেও সকলের রক্তের গ্রুপ না মেলায় তাঁদের রক্ত তড়িঘড়ি নেওয়া যায়নি। সেই সময়ই হাসপাতালের বিভিন্ন কাজে আসা লোকজন মাইকিং শুনে এগিয়ে এসে রক্ত দান করেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছে কালনা শহরের বাসিন্দা অর্ণব কার্ফা, খোকন বিশ্বাস, উদয় বারিক, অনিকেত বিশ্বাসরা। অর্ণব বলেন, “বাবার মাধ্যমে খবর পাই রক্ত দিলে এক জন বাঁচবে। সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে যাই। কারণ এটা আমাদের কর্তব্য।” অন্যদিকে অনিকেত ও উদয় ও খোকনরা বলেন, “মাইকিং করাতেই আমরা সকলে জানতে পেরেছি বিভিন্ন সূত্র মারফত। যার জন্য হাসপাতালও খুব ভাল ভূমিকা নিয়েছে।” তারপরেই দু’বোতল দেওয়া দেওয়া যায় রেনুকাকে। পরে বাইরে থেকে কয়েজন রক্তদাতা আসেন রক্ত দিতে।
[পুলিশ আবাসন থেকে উদ্ধার এএসআইয়ের দেহ, আটক স্ত্রী]
রেনুকার দিদি রুপা সরেন বলেন, “ওর স্বামী পরমেশ মাঠে কাজ করে। তাঁর পক্ষে রক্ত জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। আমাদেরও কোন সদস্য ছিল না ওই গ্রুপের রক্তের। শেষে হাসপাতালই আমাদের বোনের জীবন বাঁচাল। যার জন্য আমরা এই হাসপাতালের কর্মী ও রক্তদাতাদের উপর চিরজীবন ঋণী থাকব। ভাবতে পারিনি সকলে এতটা সাহায্য করবে।” কালনা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বড়াই বললেন, “আমাদের হাসপাতাল সব সময়ই রোগীদের সুচিকিৎসার কথা ভাবেন। নিজেদের মানবিকতা বোধ ভুলে যান না। মাইকিং না করলে রক্ত পাওয়া যেত না। এই ভাবে পাশে দাঁড়ানোর কথা খুবই কম শোনা যায়। যার জন্য আমরা খুবই গর্বিত। আমরা এভাবেই রোগীদের পাশে থাকতে চাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.