স্টাফ রিপোর্টার, শিলিগুড়ি: পানীয় জলের দাবিতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নকশালবাড়ির সেবদোল্লাজোতের বাসিন্দারা। ওই গ্রামে থাকতেন জনপ্রিয় নকশাল নেতা কানু সান্যাল। বুধবার উত্তরবঙ্গ সফরে এসে ওই খবর পেয়ে গ্রামবাসীদের জন্য তড়িঘড়ি জলের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মেয়র গৌতম দেবকে নির্দেশ দেন, ওই গ্রামে পানীয় জলের ট্যাঙ্ক পাঠাতে। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর যেন দ্রুত স্থায়ী জলের ব্যবস্থা করে সেটা দেখার দায়িত্ব দেন জেলাশাসক প্রীতি গোয়েলকে।
পারিবারিক বিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এদিন বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে সঙ্গে নিয়ে কার্শিয়াং যান মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার ভাইপো আবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিয়ে। বিয়ের পর নবদম্পতিকে মুখ্যমন্ত্রী আশীর্বাদ করবেন। এছাড়াও আগামী ছয়দিন কিছু কর্মসূচি রয়েছে। বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে নকশালবাড়ির ঘটনা শুনে কিছুটা হতবাক হয়ে যান।
ওই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন কানু সান্যাল। তিনি আজীবন কৃষকদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করেছেন। সাতের দশকে ওই এলাকা থেকে উঠে এসেছিল নকশালবাড়ি আন্দোলন। এলাকায় কানুবাবু প্রত্যেকের ভালোবাসার মানুষ ছিলেন। সেখানেই কি না পানীয় জলের অভাব! নদীর জলের ভরসায় বেঁচে থাকতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সেই নদীর জলও আবর্জনায় ভরে দূষিত হয়েছে। অভিযোগ, সমস্যার কথা প্রশাসনকে কয়েকবার জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি। শুধু তাই নয়। দার্জিলিংয়ের সাংসদ থাকাকালীন এস এস আলুওয়ালিয়া ওই গ্রাম দত্তক নিলেও জলকষ্টের সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হননি।
এর পরই গ্রামের বাসিন্দারা নিরুপায় হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়। তাঁরা জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের মাধ্যমে হাই কোর্টে মামলা করেন। বিচারক অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে মামলা ওঠে। এদিন এই সেই কাহিনি শুনে মুখ্যমন্ত্রী বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে দার্জিলিংয়ের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “এস এস আলুওয়ালিয়া গ্রামটি দত্তক নিয়েছিলেন। তখন সেখানে কাউকে কাজ করতে দিতেন না। অথচ নিজেও কিছু করেনি। আমাদের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর কাজ করছে। কিছুদিন সময় লাগবে। এর পর পানীয় জলের স্থায়ী সমাধান হয়ে যাবে। যতদিন না হচ্ছে ততদিন শিলিগুড়ি পুরনিগম পানীয় জলের ট্যাঙ্ক পাঠাবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর তৎপরতায় খুশি নকশালবাড়ি এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় কৃষক বিভাস বিশ্বকর্মা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী জলের ব্যবস্থা করায় কিছুটা স্বস্তি পেলাম। কিন্তু এভাবে কতদিন চলবে! আমরা স্থায়ী সমাধান চাই। পুরনিগম জল পাঠালে ধন্যবাদ জানাব মুখ্যমন্ত্রীকে।”
এদিকে মঙ্গলবার গ্রামবাসীদের কথা শোনার পর জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে বুধবার এই মামলায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের আধিকারিক এবং ঠিকাদার সংস্থাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বিচারপতি। ছিলেন গ্রামবাসীদের প্রতিনিধিও। এদিনও নিজের চেয়ার ছেড়ে নিচে নেমে সব পক্ষের বক্তব্য শোনেন বিচারপতি। শেষ পর্যন্ত ৩১ জানুয়ারির মধ্যে জল পৌঁছে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের আধিকারিকরা। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জানুয়ারি মাসে প্রকল্প শেষ হওয়ার পরেও যদি নকশালবাড়ির সেবদোল্লা গ্রামে পানীয় জল না পৌঁছয় তাহলে কত কড়া পদক্ষেপ হবে তা আপনারা ভাবতেও পারছেন না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.