কাটোয়া হাসপাতালের বেডে ওয়াজনবি শেখ। জয়ন্ত দাস
ধীমান রায়, কাটোয়া: ‘আমি কোনওদিন আল্লাহ, ভগবানকে দেখিনি। তবে আল্লাহর পাঠানো ফরিস্তার দেখা পেয়েছি। আর তার জন্যই আমি ওই কামরা থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছি।’ শনিবার কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের বেডে শুয়ে এই কথাগুলো বললেন কাটোয়ার সুদপুর গ্রামের ওয়াজনবি শেখ (২৯)। সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা ওয়াজনবির কাছে আল্লাহর ফরিস্তা হলেন কল্পনাদিদি। তাঁর কথায়, “আমার কাছে আল্লাহর পাঠানো ফরিস্তা হলেন সেই দিদি। কল্পনা দিদি।”
প্রায় ১২ বছর ধরে রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন ওয়াজনবি। বাড়িতে রয়েছেন বাবা,মা, স্ত্রী, দুই নাবালিকা মেয়ে। দু’মাস আগে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসার পর ফের কেরলে যাচ্ছিলেন। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন তিনি। এদিন সকালে তাঁকে হাওড়া থেকে জিআরপি কাটোয়াগামী ট্রেনে চাপিয়ে দেয়। কাটোয়া স্টেশনে নামার পর জিআরপি আহত ওয়াজনবিকে কাটোয়া হাসপাতালে ভরতি করে। এখন চিকিৎসাধীন।
ওয়াজনবি বলেন,”রিজার্ভেশন ছিল না। অসংরক্ষিত কামরায় ছিলাম। ইঞ্জিনের কাছেই আমাদের বগি। আমাদের কামরায় আমার পরিচিত কেউ ছিল না। আমার সামনেই বসেছিলেন কল্পনাদিদি। শুধু নামটা জানতে পেরেছি। দিদির স্বামীর চেন্নাইয়ে দোকান আছে। সঙ্গে দিদির ছেলেও ছিল। ট্রেনে আলাপ হয়।” ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে শিউড়ে উঠছেন ওই পরিযায়ী শ্রমিক। বলছেন, “একবার বাথরুম ঘুরে এসে সবে সিটে বসেছি, দিদি তখন রড ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। তখনই বিরাট ঝাঁকুনি। আমার মাথায় যেন কেউ বিদ্যুতের শক দিল মনে হচ্ছে। আটকে পড়েছিলাম। কিছুতেই বের হতে পারছিলাম না। তখন দিদির পা দুটো সামনে পেয়ে জড়িয়ে ধরে বলি,’দিদি আমাকে বাঁচান। আমার দুটো মেয়ে আছে। আমি বাঁচতে চাই।’ দিদি তখন আমাকে টেনে বের করেন। জানালা দিয়ে ঠেলে বাইরে বের করেন। এরপর যখন আমার জ্ঞান ফেরে তখন আমি হাই রোডের পাশে শুয়ে রয়েছি।”
ওয়াজনবি জানান, তখন ওই কামরার অনেকেই মারা গিয়েছেন। কারও হাত কাটা পড়েছে, কারও পা। জ্ঞান ফিরে আসার পর জনৈক কল্পনাদেবীই ওয়াজনবিকে বাসে চাপিয়ে নিজের ভাড়ায় হাওড়া নিয়ে আসেন। ওয়াজনবির কথায়,” দুর্ঘটনার পর আমার ব্যাগ, মোবাইল ফোন সব হারিয়ে যায়। পড়নের পোশাক ছিঁড়ে যায়। কাছে টাকা ছিল না। সেই দিদিই আমাকে হাওড়া পর্যন্ত এনে ৫০০ টাকা দিয়ে জিআরপির হাতে তুলে দেন। দিদির মোবাইল নম্বরটা চেয়েছিলাম। কিন্তু জিআরপির তাড়াহুড়োতে পাওয়া সম্ভব হয়নি। এখনও আমি বেঁচে রয়েছি কল্পনা দিদির জন্য। তার সঙ্গে আমার কোনওদিন দেখা হোক আর না হোক, দিদিই আমার জীবনের ফরিস্তা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.