মাধ্যমিকে সম্ভাব্য চতুর্থ কাটোয়ার সেলিম।
ধীমান রায়, কাটোয়া: মাধ্যমিকে সম্ভাব্য চতুর্থ স্থানে রয়েছে কাটোয়ার মহম্মদ সেলিম। ভূগোলে ১০০ নম্বর পেয়েছে সে। আর সেই নম্বরের জন্য অবদান সম্প্রতি চাকরিহারা শিক্ষক শুভেন্দু কর্মকারের। এমনই জানিয়েছে সেলিম। ভূগোল শিক্ষকের চাকরি না থাকায় মন খারাপ তার। মহম্মদ সেলিমের সাফল্যে খুশি পরিবার থেকে প্রতিবেশী, স্কুলের শিক্ষকরা।
মায়ের অকালমৃত্যুর পর মামাবাড়িতে আশ্রয়। মামা গৃহশিক্ষকতা করেন। নিতান্ত ছাপোষা পরিবার। তাই টিউশন তেমন জোটেনি। মামা মহম্মদ ফজলে কেরিম বাড়িতে ভাগ্নেকে দেখাতেন। আর মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে কয়েকমাস অঙ্ক, জীববিজ্ঞান ও ভৌতবিজ্ঞান এই তিনটি বিষয়ে টিউশন পড়তে যেত মহম্মদ সেলিম। ওই গৃহশিক্ষকরা তাকে বিনা বেতনেই পড়াতেন। রোজ ৬-৭ ঘণ্টা পড়াশোনা করে মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে চতুর্থ স্থান দখল করেছে কেতুগ্রামের সেরান্দি গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ সেলিম। সে নিরোল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। সেলিমের প্রাপ্ত নম্বর ৬৯২। মেধাতালিকায় চতুর্থ স্থানে একমাত্র সেলিমের নাম রয়েছে।
বাবা গোলাম গাউস কেতুগ্রামের আগরডাঙা হাইমাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। সেলিমের মা সেরিনা বেগম রোগভোগে সাত বছর আগে মারা গিয়েছেন। তারপর থেকেই সেলিমের ঠাঁই হয় মামাবাড়িতে। বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধ দাদু আবদুর সাত্তার ও দিদা রসিদা বিবি। মামা মহম্মদ ফজলে কেরিম গৃহশিক্ষকতা করেন। ভাগ্নেকে উচ্চ প্রতিষ্ঠিত করাই মামার লক্ষ্য। কেবল আর্থিক প্রতিবন্ধকতাই নয়, মহম্মদ সেলিম বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। কিন্তু প্রচণ্ড অধ্যবসায় এবং নিষ্ঠার জোরে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে সে হেলায় হারিয়েছে। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় এই অভাবনীয় সাফল্যের পর মহম্মদ সেলিম বলে, ‘‘দাদু দিদার সঙ্গে বসে টিভিতে মাধ্যমিকের ফলাফলের খবর দেখছিলাম। তারপর তৃতীয় স্থানাধিকারীর পরেই আমার নাম ঘোষণার পর সবাই চমকে উঠি। ভালো ফল হবে জানতাম। তবে এতটা প্রত্যাশা করিনি। আমি আমার এই সাফল্য মামাকে উৎসর্গ করতে চাই।’’
সেলিম জানায়, তার প্রিয় বিষয় রসায়ন। তবে ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে গবেষণা করতে চায়। অবশ্য দেশ ছেড়ে যেতে চায় না। পড়াশোনার বাইরে শখ বলতে গল্পের বই পড়া। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় শেষবার সিনেমা দেখেছিল সেলিম। কিন্তু ভাগ্নের পড়াশোনার স্বার্থে তখন থেকেই ঘরের টেলিভিশনটি বাক্সবন্দি করে তুলে রেখেছেন মামা। খেলার মাঠ তেমন মন টানে না সেলিমের। ঘরে যে স্মার্টফোন রয়েছে তাতে সিমকার্ড নেই। শুধুমাত্র শিক্ষকদের পাঠানো নোট ফলো করতে মাঝেমধ্যে ব্যবহার করে। নিরোল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক শিক্ষিকার চাকরি বাতিল হয়। ভূগোলের শিক্ষক শুভেন্দু কর্মকার ও সংস্কৃত সুচরিতা চৌধুরী। ভূগোলের শিক্ষকের জন্য মনখারাপ সেলিমের। সেলিম বলে, ‘‘আমি ভূগোলে ১০০ পেয়েছি। এজন্য শুভেন্দু স্যারের অবদান রয়েছে।’’ উল্লেখ্য, গত বছর এই স্কুলের দশম স্থানাধিকারী দেবপ্রিয়া দত্ত ও ভূগোল বিষয়ে ১০০ পেয়েছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.