অর্ণব আইচ: খাগড়াগড় মামলায় তার বিরুদ্ধে জমা পড়েছিল চার্জশিট। এনআইএ-র হাতে গ্রেপ্তারও হয়নি সে। তাকে নিজেদের হেফাজতে পেলে হয়তো খাগড়াগড়ের তদন্তে সুবিধাই হত ভারতীয় গোয়েন্দাদের। কিন্তু তার আগেই বাংলাদেশে ফাঁসির হুকুম হল খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত বলে পরিচিত হাতকাটা নাসিরুল্লার।
জেএমবি থেকে নব্য জেএমবি। বোমারু মিজান নামে যে বন্ধুটির সঙ্গে নাসিরুল্লার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক, সেই বন্ধু মিজানের সঙ্গেই ‘আদর্শ’ ও টাকার ভাগাভাগি নিয়ে গোলমাল। বছর তিনেক আগে তা এমনই পর্যায়ে চলে যায় যে, বেঙ্গালুরুর গোপন ডেরায় রীতিমতো মারপিট শুরু হয়ে যায় মিজান ও নাসিরুল্লার। মিজান দলে ভারী থাকায় নাসিরুল্লাকে আক্ষরিক অর্থে ঘাড় ধরে বের করে দেওয়া হয় ডেরা থেকে। অথচ বন্ধু মিজানের ডাকেই যে বেঙ্গালুরুর গোপন ডেরায় বৈঠক করতে গিয়েছিল নাসিরুল্লা। এর পরই আইএস প্রভাবিত নব্য জেএমবিতে যোগ দেয় নাসিরুল্লা। জেএমবির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদে নাসিরুল্লা নব্য জেএমবির ঘাঁটি তৈরি করতে শুরু করে। জেএমবির ধুলিয়ান মডিউলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় নব্য বা নিও জেএমবির নতুন মডিউল তৈরির চেষ্টা করে সে।
২০১৪ সালে বর্ধমান, বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে অল্পদিনের মধ্যে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) যে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল, তার মূলে ছিল বাংলাদেশের দুই জঙ্গি নেতা হাতকাটা নাসিরুল্লা ও বোমারু মিজান। এই রাজ্যে মিজান পরিচিত ছিল কওসর নামে। দু’জনই বোমা বিশেষজ্ঞ ও হ্যান্ড গ্রেনেড, আইইডি তৈরিতে দক্ষ। বাংলাদেশে বোমা তৈরি করতে গিয়ে হাত উড়ে যায় নাসিরুল্লার। সেই থেকে তার নামের আগে জুড়ে যায় ‘হাতকাটা’। নাসিরুল্লা ও মিজান এই দুই সঙ্গী মিলেই জেএমবির নেটওয়ার্ক শক্ত করে বাংলাদেশে হ্যান্ড গ্রেনেড পাচার শুরু করে। তারা দু’জন মিলেই হ্যান্ড গ্রেনেড তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছিল অন্যান্য জঙ্গিদের। শিমুলিয়া ও লালগোলার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ছাত্র—ছাত্রীদের ক্লাস নিত নাসিরুল্লা।
মূলত তার নির্দেশে ক্লাসে আইএস নেতাদের বক্তৃতার ভিডিও ক্লিপিংসও দেখানো হত। গ্রামে গ্রামে ঘুরে যে টিম জেএমবির—র ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য কিশোর—কিশোরীদের সংগ্রহ করত, নাসিরুল্লা ছিল তাদের মাথা। খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পর কখনও শ্রমিক সেজে দক্ষিণ ভারত, আবার কখনও বিহার বা অসমে পালিয়ে বেড়িয়েছে সে। ডান হাত কবজির উপর থেকে কাট বলে সহজেই শনাক্ত হতে যেতে পারত সে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘোরাঘুরি করার সময় সে ভারতীয় গোয়েন্দাদের নজরেও আসে। তাই বাংলাদেশে পালিয়ে যায় নাসিরুল্লা। সেখানেই সে ধরা পড়ে বাংলাদেশ গোয়েন্দাদের হাতে।
[আরও পড়ুন: হোলি আর্টিজান মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গির মাথায় আইএস টুপি, তুঙ্গে বিতর্ক[
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.