পলাশ পাত্র, তেহট্ট: কৃষ্ণনগর জেলা সংশোধনাগার কেন্দ্রীয় কারাগার হতে চলেছে। এই মর্মে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। শনিবার সংশোধনাগারে পরিদর্শনে সেখানে যান রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস, ডিজি (কারা) অরুণ গুপ্তা সহ একাধিক প্রশাসনিক কর্তা। এদিন উদ্বোধন করা হয় অত্যাধুনিক নজদারি ব্যবস্থা, মহিলা কারারক্ষীদের ভবন ও ডেন্টাল ক্লিনিক। এর আগে শুধু প্রেসিডেন্সি ও দমদম সংশোধনাগারেই এই ডেন্টাল ক্লিনিক ছিল।
এদিন পরিকাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে মহিলা রক্ষীদের আবাসনেরও উদ্বোধন হয়। ডিজি অরুণ গুপ্তা বলেন, “সেন্ট্রাল জেলের একটা প্রস্তুতি চলছে।” কারা মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, “এই সংশোধনাগারকে আমরা চেষ্টা করছি সেন্ট্রাল জেল হিসেবে তৈরি করার। পশ্চিমবঙ্গ সরকার নতুন আরেকটি সংশোধনাগার করতে চায়। একে আধুনিকভাবে সজ্জিত করা হচ্ছে। তার জন্য ষাটটি আধুনিক সিসিটিভি বসানো হয়েছে। এখানে ইন্টারনেট থেকে ডিজিটালের আরও উন্নত প্রযুক্তি আমরা আনতে চাইছি। ছোট ছোট ক্ষেত্রেও প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।”
রাজ্যে আটটি জায়গায় কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার রয়েছে। কৃষ্ণনগর সংশোধনাগারে এত উন্নত পরিকাঠামো তৈরি করার লক্ষ্য যে একেও কেন্দ্রীয় স্তরে উন্নীত করা, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তথ্যভিজ্ঞ মহলের মতে, নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্ত জেলা নদিয়াকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কারণ একাধিক।
বাংলাদেশের জঙ্গি কার্যকলাপ-সহ বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মাথাব্যথা রয়েছে। নদিয়ায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২২২ কিলোমিটার। এর মধ্যে স্থলভাগে ফেন্সিং রয়েছে ১৯৪.৩ কিলোমিটার ও নদীপথে মাত্র ৪ কিলোমিটার। নদী এলাকায় ১৩.৫ কিলোমিটার ও স্থল এলাকায় ১০.২ কিলোমিটার এলাকায় কোনও ফেন্সিং নেই। অর্থাৎ নদিয়ায় অরক্ষিত এলাকা ২৩.৭ কিলোমিটার। নদিয়ার তেহট্ট মহকুমার হোগলবেড়িয়া থানার পদ্মা নদীর ধারে কাছারিপাড়া, চেচানিয়া, মধুগারি, বাউসমারি সহ প্রায় সাত কিমি এলাকা এখনও ফেন্সিং নেই। মুরুটিয়া থানার শিকারপুর, কুঠিরপাড়া নিয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা কাঁটাতারহীন। তেহট্ট মহকুমায় প্রায় ন’ কিলোমিটার এলাকা আজও অরক্ষিত। কাঁটাতারহীন এলাকায় বিএসএফ ফেন্সিং দেওয়ার কাজে উদ্যোগী হয়েছে। জমি কেনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নদিয়ায় মাওবাদীদের সক্রিয়তা একসময় থাকলেও, এখন তা নেই। বরং জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে নিহত জেএমবি জঙ্গি শাকিল গাজি করিমপুরের বারবাকপুরের মেয়েকে বিয়ে করে সেখানেই ঘাঁটি গেড়েছিল। একই ঘটনায় করিমপুর ২ ব্লকের থানারপাড়ার বাসিন্দা জহিরুল শেখ এনআইএ-র হাতে ধৃত। জহিরুলের মতো জেএমবির কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে কালীগঞ্জ ব্লকের মির্জাপুরের গিয়াসুদ্দিন মুন্সিকেও এনআইএ গ্রেপ্তার করেছ। এরা তিনজনই নদিয়া জেলার।
গোয়েন্দা সূত্রেও জানা গেছে, মায়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে এ দেশের সীমান্ত পথ দিয়ে রোহিঙ্গা, জেএমবি-সহ একাধিক জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের অনুপ্রবেশ হতে পারে। পুলিশের একাধিক কর্তা বারবার জানিয়েছে, সীমান্তে ইনটেলিজেন্স কাজ করছে। বছর খানেক আগে নবান্নে তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকে সীমান্তে কাঁটাতার, অনুপ্রবেশ-সহ একাধিক বিষয়ে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়। তারপরই লক্ষ্য করা গিয়েছে সীমান্তে জমি কেনার জন্য বিএসএফের তৎপরতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.