বিপ্লব দত্ত, শান্তিপুর: মাতৃ আরাধনায় শামিল গোটা রাজ্য। এবঙ্গে দক্ষিণাকালী রূপেই মায়ের পুজোর চল বেশি। এই দক্ষিণমুখী কালিকা কীভাবে এল? কে এর রূপদান করলেন? পুজো পদ্ধতিও বা কার? জানা যায় দক্ষিণাকালীর এই বহুল প্রচারের পিছনে নেপথ্যে একজনই। তিনি মহাপণ্ডিত তথা সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। এই সাধকের হাত ধরে শুরু হওয়া শান্তিপুরের আগমেশ্বরী কালীর পুজো শুরু হয়। যা এখন গোটা রাজ্যের দ্রষ্টব্য।
[দস্যুর তেজ আর রাজার ইচ্ছে, দুইয়ের যোগসূত্রে এই কালীক্ষেত্রর প্রতিষ্ঠা]
দক্ষিণাকালীর আগে কাপালিকদের মধ্যে বামাকালীর প্রচলন ছিল। শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদের সম্পাদক সুশান্ত মঠের কথায়, কৃষ্ণানন্দই আগম শাস্ত্রমতে দক্ষিণাকালীর পুজোর নিয়ম, নির্ঘণ্ট তৈরি করেন। আদতে তিনি ছিলেন ওপার বাংলার লোক। তাঁর পড়াশোনা ভাটপাড়ায়। সেই সূত্রে তিনি আগমবাগীশ উপাধিলাভ পেয়েছিলেন। সমস্ত তন্ত্রের সংকলন করে লিখেছিলেন বৃহৎ তন্ত্রসার। সেই নিয়মবিধি আজও প্রচলিত। তাঁর স্বপ্নাদিষ্ট দেবী বর্তমানে পুজিতা হন। বলা হয় আগমবাগীশের প্রভাবে বঙ্গদেশে শক্তি সাধনার ধারার আমূল বদল ঘটে। শক্তির আরাধনার দরজা সাধারণের জন্য খুলে গিয়েছিল আগমবাগীশের হাত ধরেই। ওই মত অনুযায়ী আগমবাগীশই গৃহস্থের উপযুক্ত করে দেবীর রূপটি ফুটিয়ে তুলেছিলেন। এই সাধক তথা পণ্ডিত যে মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন, তাতে মিশেছিল সংস্কৃত সাহিত্যের ধ্রুপদি ঐতিহ্যের প্রকাশও।
[কী রহস্য কালী মূর্তিতে? কেন মা নগ্নিকা?]
কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের প্রপৌত্র সার্বভৌম আগমবাগীশ শান্তিপুরে বর্তমান আগমেশ্বরী মাতার পুজো শুরু করেন। শান্তিপুরের গোস্বামী বংশের মথুরেশ গোস্বামীর কন্যার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তবে নবদ্বীপের শাক্ত সমাজ এই বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়নি। গোস্বামীদের সঙ্গে শাক্তদের বিয়ে তখন অপরাধ বলে মনে করা হত। সেই কারণে নবদ্বীপ ছেড়ে সার্বভৌম আগমবাগীশ চলে আসেন শান্তিপুরে। জামাইয়ের জন্য মথুরেশ গোস্বামী বর্তমান মন্দির সংলগ্ন স্থানে তৈরি করেছিলেন পঞ্চমুণ্ডির আসন। স্বপ্নাদিষ্ট প্রতিমা একদিনেই রচনা-অর্চনা ও বিসর্জন হত। শুরুর সময় প্রতিমার উচ্চতা ছিল বেশ ছোট। পরবর্তীতে তা অনেকটাই বাড়ে। প্রায় ৯০ বছর আগে কানাইলাল গোস্বামীর হাত ধরে প্রতিমা বিশালতা প্রাপ্তি পায়। সার্বভৌম নিঃসন্তান ছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর পুজোর দায়িত্ব শ্বশুরকূলের ওপর পড়ে। কারও থেকে চাঁদা নেওয়া হয় না। দানের অর্থেই পুজো হয়। কার্তিক অমাবস্যায় কয়েক হাজার পূণ্যার্থী এবারও ভিড় জমান আগমেশ্বরীতলায়। বহু ভক্ত উপবাস করে থাকেন। দর্শনার্থীদের জন্য কয়েক মণ গোবিন্দভোগ চালের পোলাও এবং অন্যান্য প্রসাদের ব্যবস্থা থাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.