জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: দেশজুড়ে লকডাউন। বন্ধ সীমান্ত বাণিজ্য। পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির বন্ধের জেরে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন কাজে যুক্ত কয়েক হাজার শ্রমিক। ঘরবন্দি হয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। শ্রমিকদের সাফ বক্তব্য, দৈনিক উপার্জনের উপরে সংসার চলে৷ বাইরে বেরলে করোনায় মৃত্যু হবে, আর ঘরে থাকলে না খেয়ে মরবেন।
প্রশাসনের নির্দেশে লকডাউন চলাকালীন কেউ যাতে অভুক্ত না থাকেন, তার জন্য সকলের ঘরে ঘরে চাল-ডাল ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সেই সাহায্য মিললেও দৈনিক সংসারে নিত্যপ্রয়োজনীয় আরও নানা জিনিস ও ওষুধপত্রের প্রয়োজন রয়েছে। অর্থের অভাবে বন্ধ রয়েছে অনেকের চিকিৎসা। ফলে ওষুধপত্র কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। শ্রমিকদের দাবি, এই সমস্যা থেকে তাঁদের মুক্ত করতে করোনা ভাইরাস ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরীক্ষানিরীক্ষার ব্যবস্থা করা হোক। সামাজিক দূরত্ব ও বিধিনিষেধ মেনে চালু করা হোক আমদানি-রপ্তানি৷
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল বন্দর এশিয়ার বৃহত্তম স্থলবন্দর৷ এই বন্দর দিয়ে দৈনিক কয়েক হাজার ট্রাক বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মালপত্র আমদানি-রপ্তানি করে৷ প্রতিদিন হাজার খানেক যাত্রী ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াত করেন৷ পেট্রাপোল বন্দরকে কেন্দ্র করে এলাকায় গড়ে উঠেছে কয়েকশো মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র। এই গোটা বিষয়টির উপর নির্ভর করে রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। কেউ মজুরির কাজ করেন, কেউ ট্রাকচালক বা খালাসি। কাজের বিনিময়ে দৈনিক আয়ই তাঁদের রুটিরুজি। পেট্রাপোল বন্দর বন্ধ থাকায় প্রতিদিনের কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন ওই মানুষজন।
বৃহস্পতিবার পেট্রাপোল বন্দরে গিয়ে দেখা গেল শুনশান বন্দর এলাকা। বিমর্ষ হয়ে ছড়িয়েছিটিয়ে বসে রয়েছেন কয়েকজন শ্রমিক। সুভাষ মণ্ডল বলেন, “দৈনিক মজুরি দিয়ে সংসার চলে আমাদের৷ কিছু সরকারি সাহায্য পেলেও ওষুধপত্র কিনতে পারছি না। বউ, বাচ্চা নিয়ে সমস্যার মধ্যে আছি। নিয়মকানুন মেনে আমদানি-রপ্তানি চালু না হলে আমাদের মরে যেতে হবে।” পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং ফরওয়ার্ডিং এজেন্টের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তীর কথায়, “জেলা প্রশাসনের মৌখিক নির্দেশে বন্ধ রয়েছে আমদানি-রপ্তানি। আমরা চাই, স্বাস্থ্যবিধি-সহ সমস্ত নিয়মকানুন মেনে চালু হোক এক্সপোর্ট- ইমপোর্ট।” জেলা পরিষদের মেন্টর গোপাল শেঠ বলেন, “শ্রমিকদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সারা দেশের মানুষ সমস্যার মধ্যে রয়েছেন৷ কিন্তু কাউকে চক্রান্ত করে পেট্রাপোল এলাকায় করোনা সংক্রমণ ছড়াতে দেব না।” এখানে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার এবং উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করার পর আমদানি-রপ্তানি চালু করার আবেদন জানান তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.