গৌতম ব্রহ্ম: একেই বলে নেশা! বাঘ দেখার জন্যে আস্ত একটা বোট কিনে ফেললেন এক আইনজীবী। ব্যাঘ্র দর্শনের জন্যে জীবন বাজি রেখে বহু মানুষ সুন্দরবনের বাদাবনে ঘুরে বেড়ান। কিন্তু বেশিরভাগের কপালে শিঁকে ছেড়ে না। যেমন দেবতাপস দাস, সৌম্য হাতি।
এই দুই ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু ১৬ বার সুন্দরবন সফর করেছিলেন। কিন্তু একবারও বাঘের দেখা পাননি। অবশেষে তাঁদের ইচ্ছেপূরণ করেছেন সেই প্রকৃতিপ্রেমী পরিবেশবিদ আইনজীবী মন্টু হাইত। তাঁর বুদ্ধিতে চলেই সপ্তদশ জঙ্গল সফর থেকে বাঘের দেখা পেয়েছেন দেবতাপস, সৌম্য। এই নিয়ে টানা চারবার। বাঘ দেখার নেশা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এবার এদের উৎসাহে আস্ত একটা বোট কিনে ফেলেছেন মন্টুবাবু। বনদপ্তরের অনুমতি নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের দিন সেই বোট শঙ্খচিল যাত্রা শুরু করেছে। সফরসঙ্গী হয়েছেন দেবতাপস, সৌম্য ও তাঁদের দুই বন্ধু বিতান রায় এবং অর্ণব গঙ্গোপাধ্যায়।
দ্বিতীয় দিনেই মিলেছে সাফল্য। বাদাবনের ফাঁক দিয়ে দেখা দিয়েছেন দক্ষিণ রায়! সেই দৃশ্য লেন্সবন্দি করেছেন দেবতাপস। ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছেন বাঘমামা। অপূর্ব ফ্রেম। মন্টুবাবু জানালেন, “সুন্দরবনে বাঘ দেখা ভাগ্যের ব্যাপার। কতিপয় মানুষের কপালে শিঁকে ছেড়ে। কিন্তু আমরা নিয়মিত বাঘ দেখতে পাই। কারণ বাঘের চলচলন, মর্জি সবটাই আমাদের নখদর্পণে। তাই আমি বাজি ধরে দেবতাপস, সৌম্যদের মতো বহু অরন্যপ্রেমিকে বাঘ দেখিয়েছি।” এই দুই বন্ধুই মন্টুবাবুকে প্রথম লঞ্চ কেনার পরামর্শ দেন, সহযোগিতাও করেন। মন্টুবাবুর কথায়, “বোট কেনা ও তা রক্ষণাবেক্ষণ করার খরচ এবং ঝক্কি প্রচুর। তাই প্রথমটায় না করে দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে রাজি হলাম। নিজের বোট থাকলে কাজ করতে, নমুনা সংগ্রহ করতে, ছবি তুলতে অনেক সুবিধা হয়।” যেমন ভাবা তেমন কাজ। আসলে বাঘ দেখার জন্যে এমন ডাবল ইঞ্জিনের বোট চাই যাতে আওয়াজ খুব কম হবে, আবার দ্রুত আগু পিছু করতে পারবে। সব দেখে শুনেই বোট তৈরি করিয়েছেন মন্টুবাবু। কিন্তু এই বোটে কি শুধু উকিলবাবু আর তাঁর বন্ধুরাই চড়বেন? একগাল হেসে মন্টু বাবু জানালেন, “এখন কিছুদিন প্রাণভরে চড়ে তো নি। পরে পড়ুয়াদের চড়াব। বাঘ দেখাব।”
জানা গিয়েছে, সুন্দরবনের গদখালি থেকে যাত্রা শুরু করেছিল শঙ্খচিল। ৪০ আসনের এই ট্যুরিস্ট বোট মূলত প্রকৃতি বিক্ষণের কাজেই ব্যবহার হবে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন কলেজের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও ছাত্ররা যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। মন্টু বাবু জানালেন, ছাত্রদের জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা রাখার ইচ্ছে আছে। তবে চাইলে অন্য প্রকৃতি প্রেমীদেরও সফরসঙ্গী করা হবে। বনদপ্তরের অনুমতি নিয়ে ঘোরানো হবে বাদাবনের হরেক আনকোরা দ্বীপ, বদ্বীপ।
প্রকৃতি চর্চার জন্যে মন্টুবাবু নিজে পীরখালির উলটোদিকে বালি দ্বীপের একটি অংশ কিনে প্রজাপতির বাগান করেছেন। সেই প্রজাপতি দ্বীপেও ভিড়বে লঞ্চ। অনেকদিন ধরেই এই অঞ্চল নিয়ে গবেষণা করছেন মন্টুবাবুরা। গেরিলা গার্ডেনিং, মাইক্রো ফরেস্টিংয়ের মতো কাজ নীরবে করছেন। এবার পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমীদের বাঘ দেখার সাধপূরনে যাত্রা শুরু করল শঙ্খচিল। সত্যি পারেন বটে উকিলবাবু। বলছেন স্থানীয় মানুষজন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.