চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: ডাকাত কালীর নাম শোনেনি এমন বাঙালি নেই। গল্প পড়েই বাঙালি জেনেছে, ডাকাতরা কালীসাধক হন। কিন্তু সত্যিই এখনও ডাকাত কালীর পুজো হয়। এখানে ডাকাত সর্দার নিজে হাতে মা কালীর পুজো করেন। এই কালীসাধক অবশ্য এখন আর ডাকাতি করেন না। তবে ডাকাতি ছাড়লেও কালীপুজো ছাড়েননি। রত্নাকর, দস্যু বৃত্তি ছেড়ে হয়েছিলেন ঋষি বাল্মীকি। জামুড়িয়ার ‘অধম ডাকাত’ হয়েছেন এখন ‘অধম সাধু’।
৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে কেন্দা যাওয়ার পথে পড়ে অধম বাবার আশ্রম। কালো পোশাক, লাল তিলক, পক্ক কেশ-সহ দাড়িওয়ালা এক বাবাজির দেখা মিলবে আশ্রমের কালীমন্দিরে। ৭৪ বছরে ওই বৃদ্ধের নাম অধম। স্থানীয়রা যাঁকে ‘অধম বাবা’ বলে ডাকেন। শ্মশানকালীর ওই মন্দিরটি এলাকায় পরিচিত ডাকাত কালী মন্দির নামে। কারণ এই অধম বাবা ছিলেন একসময়ের ডাকসাইটে ডাকাত দলের সর্দার। ভক্তদের প্রবচন শোনাবার সময় অতীতের ডাকাতির গল্প ঘটা করে বলেন অধম বাবা। তিনি কী পাপ করেছেন সেই প্রসঙ্গ টেনে এখন নীতি আদর্শ আর তত্ত্বে কথা শোনান। অধম থেকে উত্তম হওয়ার সেই গল্পের টানেই বেড়ে চলেছে ভক্তকূলের সংখ্যাও। অধম বাবার নিজস্ব উক্তি “বেশ্যা না হলে তপস্বী হয় না। আর চোর না হলে নাকি সাধু হয় না।” আশ্রমে গেলেই দেখা মিলবে কালী মূর্তির পিছনে সাইন বোর্ডে বড় বড় করে হরফে লেখা “বেশ্যা সাধু, ডাকাত সাধু”।
অধম বাবার দাবি বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় এক সময় চুটিয়ে ডাকাতি করেছেন তিনি। যখন তিনি যুবক, তখন গৃহস্থ বাড়ি থেকে পোস্টঅফিসের মতো সরকারি দপ্তরেও দলবল নিয়ে হানা দিতেন। বিভিন্ন জায়গায় লুটপাট চালিয়ে ১৪টি বন্দুক জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু ডাকাতি করতে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেন এইভাবে অর্থ উপার্জন হলেও কেউ সুখী হতে পারে না। পাপের ফল না পরিবারের কাজে লাগে, না নিজের ভোগে। দল ছেড়ে ধরা দেন পুলিশের কাছে। জেলও খাটেন। তারপরই মন দেন তপস্যা, সাধনায়। সর্বদা পড়ে থাকতেন কালীমন্দিরে। ডাকাত দলে নাম লেখানোর আগে কীর্তনের দলে গান গাইতেন এই অধম। মন্দিরে বসে পুরনো অভ্যাস ঝালিয়ে নেওয়া শুরু হয়। ডাকাতি ছেড়ে অ্যাধ্যাত্মিকতায় চলে আসায় খুশি হন গ্রামের মানুষ। জমি দান করে তাঁরা অধমকে আশ্রম গড়তে সাহায্য করেন। অধম ডাকাত থেকে হয়ে যায় অধম বাবা। তখন থেকেই অধমের কালীর নাম হয়ে যায় ডাকাত কালী। অধম বাবার জনপ্রিয়তা এতটাই যে স্থানীয় পঞ্চায়েত আশ্রমের পাশে শ্মশানঘাটটির সরকারিভাবে নামকরণ করেছে অধমবাবা শ্মশানঘাট। সেই অধমবাবার মন্দিরে দীপান্বিতা অমাবস্যায় ডাকাত কালীর পুজো হয় মহা ধুমধামের সঙ্গে। অধমবাবা বসেন পঞ্চমুণ্ডির আসনে। কালীপুজোয় বিরাট মেলাও বসে আশ্রম চত্বরে।
ছবি: মৈনাক মুখোপাধ্যায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.