দীপঙ্কর মণ্ডল: ‘পরীক্ষা না প্রহসন?’ চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা তুলে দিল এই বিতর্কই। একের পর এক প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষা মহলের বহুচর্চিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এটাই – ‘এটা কি পরীক্ষা হচ্ছে না প্রহসন?’ মঙ্গলবার পরীক্ষার প্রথম দিন থেকে প্রথম ভাষা, দ্বিতীয় ভাষার প্রশ্ন পরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে এসে গিয়েছিল পরীক্ষার ঠিক আধ ঘণ্টার মাথায়। আজ, শুক্রবার ইতিহাসের প্রশ্নও ঠিক একই সময়ে চলে এল সামনে। ফলে এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা পদ্ধতিই বড়সড় সমালোচনার মুখে। তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দায়িত্ববোধ নিয়ে।
[ পরপর দু’দিন প্রশ্ন ফাঁসের জের, মোবাইল নিয়ে ঢুকলেই পরীক্ষা বাতিলের নির্দেশ]
মঙ্গলবার মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর দিন ছিল প্রথম ভাষার পরীক্ষা। ঠিক সাড়ে ১২টা অর্থাৎ পরীক্ষা শুরুর আধঘণ্টার মধ্যে দেখা গেল, প্রশ্নপত্র হোয়াটসঅ্যাপ এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। বিকেল ৩টেয় পরীক্ষা শেষের কিছুক্ষণ পর পর্ষদের তরফে প্রাথমিক তদন্তের পর স্বীকার করা হয় যে, বাংলার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন ফাঁসের কথা স্বীকার করলেও পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করেনি পর্ষদ। দ্বিতীয় দিনও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। পরীক্ষা শুরুর আধঘণ্টার মধ্যে বেরিয়ে এল দ্বিতীয় ভাষা ইংরাজি গোটা প্রশ্নপত্রটিই।পরীক্ষার শেষে দেখা গেল, হুবহু মিলে গিয়েছে প্রশ্ন। অর্থাৎ ওই প্রশ্নেই পরীক্ষা দিয়েছেন লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থী। পরপর দু দিন এমন ঘটনায় কিছুটা নড়েচড়ে বসে পর্ষদ। পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন সহ ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেটের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। কিন্তু বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো হয়েই যে থেকে গিয়েছে, তার প্রমাণ মিলল শুক্রবার ইতিহাস পরীক্ষায়। এদিনও ঠিক সাড়ে ১২টা নাগাদ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে একটি ছবি। যাতে দেখা যাচ্ছে, একজন কেউ প্রশ্নপত্রটি ধরে রয়েছেন, ছবি তুলেছেন আরেকজন। ব্যস, এরপরই শিক্ষামহলের একাংশ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ থাকে। নিজেদের মধ্যে এনিয়ে কৌতুকও শুরু করেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে থাকেন – ‘এটা কি পরীক্ষা হচ্ছে না প্রহসন?’
গত বছর উত্তরবঙ্গের ময়নাগুড়ির সুভাষনগর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আঙুল উঠেছিল। তাঁর ভূমিকাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছিল। সেই ঘটনা থেকে সতর্ক হয়ে এবছর আর প্রধান শিক্ষকদের ওপর ভরসা রাখেনি পর্ষদ। মূল পরীক্ষক হিসেবে প্রতিটি কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পর্ষদ মনোনীত সরকারি আধিকারিকদের। আর তাতেই একের পর এক প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা। এতেই শিক্ষামহলের একাংশের সমালোচনা, এবারের এসব ঘটনায় আর স্কুল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করতে পারবে না মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। কারণ, যাঁদের ওপর ভরসা করে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা যে সম্পূর্ণ ব্যর্থ, তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এতক্ষণে। ফলে মাধ্যমিক সংক্রান্ত যাবতীয় অনভিপ্রেত ঘটনার সমস্ত দায়িত্ব এবার পর্ষদকেই নিতে হবে। বিকেল ৩টেয় পরীক্ষা শেষের পর পর্ষদের প্রতিক্রিয়া জানার অপেক্ষায় শিক্ষা মহল।
[ নেটদুনিয়ার নতুন নায়ক, বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর ‘ডেলিভারি বয়’]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.