প্রতীকী ছবি।
বাবুল হক, মালদহ: মালদহের গাজোলে জাতীয় সড়কের ধারে মুণ্ডহীন দেহ ও কিছুটা দূরে কাটা মাথা উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করল পুলিশ। মর্মান্তিক দুর্ঘটনার বলি ওই ব্যক্তি। বিলাসবহুল গাড়ির ধাক্কায় সামনের কাচ ভেঙে মাথা ঢুকে যায় গাড়ির ভিতর। দেহটা পড়েছিল ইঞ্জিনের উপর। গাড়ির মদ্যপ চালক ও আরোহী মিলে দেহ সরানোর চেষ্টা করতেই মুণ্ড ও দেহটি আলাদা হয়ে যায়। ঘাতক বিলাসবহুল গাড়িটি পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। পাশাপাশি ‘অনিচ্ছাকৃত’ খুনের অভিযোগে পুলিশ তিন যুবককে গ্রেপ্তারও করেছে। এদিকে ঘটনাটি ঘিরে ‘নরবলি’ সন্দেহ করে যে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল, তদন্তে নেমে শনিবার তা নস্যাৎ করে দিয়েছেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা।
শুক্রবার সকালে গাজোলের দেওতলা অঞ্চলের ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে একজনের মুণ্ডবিহীন দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। তাঁর পায়ে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। তাঁর মাথার খোঁজ শুরু করেন স্থানীয়রা। কিছুটা দূরে জঙ্গলের মধ্যে তাঁর মুণ্ড পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই খবর চাউর হতেই গাজোল এলাকায় জোর শোরগোল শুরু হয়ে যায়। খবর পৌঁছয় গাজোল থানায়। তড়িঘড়ি আইসি চন্দ্রশেখর ঘোষালের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দেহ এবং মুণ্ড উদ্ধার করা হয়। দেহ এবং মুণ্ড মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর মৃত ব্যক্তির নাম, পরিচয় জানা যায় বলে পুলিশ জানিয়েছে। মৃত ওই ব্যক্তির নাম কৃষ্ণপদ রায় (৬৬)। বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বেলবাড়ির অধিকারী পাড়া এলাকায়। পরিবারের সদস্যরা জানান, কৃষ্ণপদবাবু মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। মাঝেমধ্যেই যেখানে সেখানে চলে যেতেন। আবার ফিরে আসতেন। এবার বুধবার থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। সামাজিক মাধ্যমে খবর পেয়ে পরিবারের লোকেরা ছুটে যায় গাজোল থানায়। সেখান থেকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে দেহ শনাক্ত করেন। এদিন মালদহের
পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব জানিয়েছেন, একটি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির। তিনজন যুবক একটি বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে মদ্যপ অবস্থায় জাতীয় সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। গাড়ির ভিতর ওরা রিল তৈরি করছিল। সেই সময় বেপরোয়া গতিতে চলা তাদের গাড়িটি হেঁটে চলা ব্যক্তিকে ধাক্কা মারে। ওই ব্যক্তি ছিটকে অন্যদিকে না গিয়ে উপরে উঠে যায়। সামনের কাঁচ ভেঙে মাথা গাড়ির ভিতর ঢুকে পড়ে। ধড় থাকে ইঞ্জিনের উপর। সেই সময় গাড়ির তিন মদ্যপ আরোহী ওই ব্যক্তির দেহ উদ্ধারের চেষ্টা করে। গাড়ির কাঁচে মুন্ডচ্ছেদ হয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতরা হল সৌমজিৎ সরকার (২২), ফারুক (২৮) এবং আশিস চৌধুরি (১৯)। ধৃত তিনজনেরই বাড়ি গাজোলের দেওতলা এলাকায়। অনিচ্ছাকৃত খুন ও দেহ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগে ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলা রজু করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের আদালতে পেশ করে সাতদিনের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.