শাহজাদ হোসেন, জঙ্গিপুর: জীবিকার তাগিদে ভূস্বর্গে গিয়ে জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারাতে হয়েছে। সংসারের একমাত্র রোজগেরে মানুষের এমন এক পরিণতিতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল পরিবারের। গত ২৯ অক্টোবর, জম্মু-কাশ্মীরের কুলগামে জঙ্গি হামলায় মুর্শিদাবাদের ৫ শ্রমিক নিহত হওয়ার খবর পেয়েই তৎপর হয়ে উঠেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশেই মৃতদের রাজ্যে ফিরিয়ে দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তিনি নিজে সমস্তটার তদারকি করেছেন। আর ঘটনার বেশ কিছুদিন পর বুধবার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই গিয়ে সেসব হতভাগ্য পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন। আর তাঁকে কাছে পেয়ে হারানো ভরসা ফিরে পেলেন। কান্নায় ভেঙে পড়ে শোনালেন তাঁদের দুর্দশার কথা।
বুধবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে প্রশাসনিক সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকেই কাশ্মীরে শ্রমিকদের মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলে তিনি ঘোষণা করেন যে এই সভা সেরেই বাহালনগরে যাবেন ওই পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করতে। এই প্রসঙ্গেই তিনি বিশদে জানান যে কীভাবে কাশ্মীরে কর্মরত বাঙালি শ্রমিকদের প্রাণভয়ের কথা জানতে পেরে তিনি এখান থেকে পুলিশ পাঠিয়ে, কড়া নিরাপত্তা দিয়ে তাঁদের সেখান থেকে বাংলায় ফিরিয়ে এনেছেন। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্নও তোলেন, ‘আমাদের রাজ্যেও তো কাশ্মীরের অনেকে কাজ করেন, বিহারের অনেকে কাজ করেন। তাহলে আমাদের রাজ্যের বাসিন্দারা কাশ্মীরে গিয়ে কাজ করলে কী ক্ষতি ছিল? কোনও অসুবিধা তো হওয়ার কথা ছিল না। তবু এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল..’।
সাগরদিঘির সভা শেষ করে মুখ্যমন্ত্রী সোজা গাড়িতে উঠে পৌঁছে যান বাহালনগরে নিহত শ্রমিকদের বাড়িতে। বাড়ির মহিলা, শিশুদের সঙ্গে নিয়ে দাওয়ায় বসলেন। মন দিয়ে শুনলেন তাঁদের কথা। শিশুদের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিলেন। পূর্বঘোষণামতো তাঁদের হাতে তুলে দিলেন ৫০ হাজার টাকা, যা দিয়ে তাঁরা নতুন করে জীবিকার পথ খুঁজে নিতে পারে। সেখানে দাঁড়িয়েই তিনি বলেন, ‘দেখলাম, ওঁদের মাটির ঘর। কথা বলে বুঝলাম যে খুবই অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন ওঁরা। আমি ডিএম-কে নির্দেশ দিয়েছি যে বাংলা আবাস যোজনা থেকে ওঁদের একটা করে ঘর দিতে। আর ওদের আরও টাকা দিতে বলেছি যাতে ওরা রোজগারের রাস্তা দেখতে পারে।’
পাশাপাশি তিনি পরোক্ষে বিজেপির উদ্দেশেও একটি বার্তা দিয়ে বললেন, ‘খারাপ লাগছে একটাই যে কাশ্মীরে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা তো এ রাজ্যের বাসিন্দা। অথচ এতদিন কেউ এদের খোঁজ নিতে আসেনি, আমরা ছাড়া। খুব খারাপ এটা।’ এখান থেকে মুখ্যমন্ত্রী চলে যান বহরমপুরে। তবে এই যে হতভাগ্য মানুষগুলোর পাশে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের সশরীরে গিয়ে দাঁড়ানো, এতেই যেন জীবনে নতুন করে চলার আলো দেখতে পেলেন তাঁরা।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.