রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: হাতে স্যালাইনের চ্যানেল, নাক-মুখ দিয়ে লালা ঝরছে! নাতি বলেছিলেন, ‘‘একটু বসো, ওষুধ কিনে আনছি…।” ব্যস, তারপর অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে। নাতি আর ফেরেনি। শ্যামবাজারের বছর সত্তরের বৃদ্ধাকে সটান তাজপুর (Tajpur) নিয়ে গিয়ে মেরিন ড্রাইভে বসিয়ে রেখে পালাল নাতি! ওই বৃদ্ধা করোনায় (Coronavirus) আক্রান্ত। এই সংকটকালে দায়বদ্ধতা ঝেড়ে ফেলতে চরম অমানবিক আচরণ যুবকের। অভিযোগ, ওই বৃদ্ধা করোনা আক্রান্ত বলেই তাঁকে ফেলে পালিয়ে গিয়েছে তাঁর নাতি।
বৃহস্পতিবার রাতে মেরিন ড্রাইভের ধারে ওই বৃদ্ধাকে ঠায় বসে থাকতে দেখে সকলে খোঁজখবর শুরু করেন। তাতেই জানা যায় গোটা ঘটনাটি।বৃদ্ধাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে, হাসপাতাল থেকে তাঁকে দিঘা সৈকতে নিয়ে আসা হয়েছে। একে করোনা রোগী, তারউপর মুখ থেকে অবিরাম লালা ঝরছে। এই আতঙ্কে তাঁর কাছে যেতেও ভয় পাচ্ছেন অনেকে। দূর থেকেই তাঁকে দেখছিলেন সকলে। সকালেও দেখা যায়, তিনি ওইভাবেই বসে রয়েছেন সমুদ্রের পাড়ে।
পরে অবশ্য দূর থেকেই স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাঁকে প্রশ্ন করে জানতে পারেন, তিনি আসলে কলকাতার শ্যামবাজারের বাসিন্দা। তাঁর নাতি গাড়ি থেকে নামিয়ে ‘একটা জিনিস কিনে ফিরছি’, এ কথা জানিয়ে চলে যান। স্থানীয় বাসিন্দাদের মারফত খবর পেয়ে মন্দারমনি কোস্টাল থানার পুলিশ ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে দিঘা রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে ভরতি করেন। বর্তমানে ওই বৃদ্ধার চিকিৎসা চলছে। পুলিশ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কোস্টাল থানা।
দেশে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় গতবারের তুলনায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে। বাড়ছে অক্সিজেন সংকট, টান পড়েছে ভ্যাকসিনেও। এবারে করোনা যুদ্ধে হিমশিম দশা স্বাস্থ্যবিভাগের। কোথাও বেড নেই, কোথাও অন্যান্য পরিকাঠামো নেই। ফলে যথাযথ চিকিৎসাই মিলছে না বহু করোনা রোগীর। মৃত্যুর তালিকাও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। পাশাপাশি, করোনা রোগীদের প্রতি মানুষজনের উদাসীনতা আরও বেশি করে চোখে পড়ছে। দিঘার এই ঘটনাই তার প্রমাণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.