বাবুল হক, মালদহ: কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন স্ত্রী। এই খবর পাওয়ার পর সদ্যোজাতর মুখ দেখতে আসা দূর অস্ত, স্ত্রী-মেয়েকে ফেলেই উধাও হয়ে গেল স্বামী। এমনই অমানবিক ঘটনার সাক্ষী রইল মালদহের (Maldah) একটি বেসরকারি নার্সিংহোম। টানা ২২ দিন সদ্যোজাত কন্যাকে নিয়ে নার্সিংহোমেই কাটালেন মহিলা। প্রায় ২২ দিন পর জেলা পুলিশের উদ্যোগে নার্সিংহোম থেকে তাঁদের সরকারি হোমে নিয়ে যাওয়া হয় বলে খবর।
নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, গৃহবধূর নাম পূজা মার্ডি। তাঁর বয়স ২১ বছর। স্বামী সুরজ বেসরা পেশায় শ্রমিক। তাঁদের বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর (South Dinajpur) জেলার বালুরঘাটের মঙ্গলপুর গ্রামে। বছর দেড়েক আগে প্রেম করে বিয়ে হয় সুরজ-পূজার। গত ১২ নভেম্বর প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে মালদহ শহরের ওই নার্সিংহোমে পূজাদেবী ভরতি হন। এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। সেই খবর পায় পরিবার। কিন্তু তারপর আর সুরজ বেসরা স্ত্রী-কন্যাকে দেখতে আসেনি।
কন্যাসন্তানের খবর শুনেই নার্সিংহোম থেকে ‘উধাও’ হয়ে যায় সুরজ। একদিন-দু’দিন নয়, টানা বাইশ দিন ধরে কেউই পূজা বা কন্যাসন্তানকে দেখতে আসেননি নার্সিংহোমে। এতগুলো দিন ধরে বাড়ির লোকজন যোগাযোগ না করায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষও চিন্তায় পড়ে। এরপর শুক্রবার পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়। অবশেষে মালদহ জেলা পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে শিশু ও মায়ের ঠাঁই হল সরকারি হোমে।
পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পূজাদেবী নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে জানান, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন পুত্রসন্তান চেয়েছিলেন। কিন্তু কন্যাসন্তান হওয়ার কারণেই তাঁকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছেন ওঁরা। এই ঘটনাটি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জেলা পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের কাছে লিখিতভাবে জানিয়ে দেন। এদিন ইংলিশবাজার থানার পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ শুরু করে। সদ্যোজাত কন্যাসন্তান ও মাকে সরকারি হোমে নিয়ে যায় পুলিশ। তবে পূজা ও তাঁর কন্যাকে পুলিশ উদ্ধার করলেও শুরু হয়েছে সমালোচনা। আজকের যুগেও কন্যাসন্তান জন্মানোয় কীভাবে স্ত্রীকে এভাবে ফেলে রেখে গেল স্বামী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.