সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: কোনও উপহার নয়। নাতনির বিয়ের প্রীতিভোজের আমন্ত্রিতদের অনুরোধ করলেন লেখার খাতা আনার জন্য। সেই খাতা দেওয়া হবে দুঃস্থ পড়ুয়াদের। একটি বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্র যা কিনা ছোটখাট একটি পুস্তিকা বলা চলে। সেই আমন্ত্রণপত্রে বর্ণিত হয়েছে কুড়মি জাতির বিবাহরীতি, ক্যামাখ্যা মায়ের বিবাহ সম্বন্ধীয় বিষয়-সহ বিদেশের ইতালি, গ্রিস, কোরিয়া, আফ্রিকার মতো বেশ কয়েকটি দেশের বিবাহ রীতি। এছাড়াও ওই কার্ডটিতে ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ঝাড়গ্রাম হাসপাতাল, বিদ্যুৎ বিভাগ-সহ জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। জেলার বিভিন্ন থানার ফোন নম্বরও রয়েছে। সব মিলিয়ে বিবাহের এই নিমন্ত্রণের পত্রটি একটি তথ্যবহুল পুস্তিকা হয়ে থাকবে, তা বলাই যেতে পারে।
ঝাড়গ্রাম শহরের রঘুনাথপুরের পোস্ট অফিস সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা সন্তোষকুমার মাহাতো তাঁর নাতনি শ্রীপর্ণা মাহাতোর বিয়েতে এমনই একটি সুন্দর, তথ্যবহুল নিমন্ত্রণের কার্ড করেছেন। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিমন্ত্রিতদের সঙ্গে করে একটি খাতা আনতে বলা হয়েছে। সন্তোষবাবুর একটাই কথা, সমস্ত ছেলেমেয়ে সুশিক্ষিত হোক। আগামী ২৬ জানুয়ারি শ্রীপর্ণার বিয়ের দিন। ইতিমধ্যে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে গিয়েছে বিভিন্ন পরিজন, বন্ধুবান্ধবদের কাছে। সকলেই এই ব্যতিক্রমী একটি সুন্দর তথ্যসমৃদ্ধ নিমন্ত্রণপত্র পেয়ে অত্যন্ত খুশি। সন্তোষবাবু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন। চাকরির ব্যবস্থার কারণে তিনি নিজের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার দিকে খুব একটা সময় দিতে পারেননি। কিন্তু অবসরের পর তিনি চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন তার নাতি, নাতনিদের উচ্চশিক্ষিত করার। তার জন্য তিনি সময় দিতেন। তাঁর সাতজন নাতি-নাতনি আজ উচ্চশিক্ষিত। সন্তোষবাবুর বড় ছেলে স্বপন মাহাতোর বড় মেয়ে শ্রীপর্ণা৷ সে-ও উচ্চশিক্ষিত।। শ্রীপর্ণা রাষ্ট্র বিজ্ঞানে এমএ ফার্স্ট ক্লাস এবং আন্তঃকলেজে মক পার্লামেন্টে দু’বার সচিব, স্পিকারের ভূমিকায় রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
সন্তোষবাবু বিরাশি বছর বয়সেও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সরকারি হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও যান না। সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের উপর তার পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে এবং অন্যদেরও সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে যাতে উৎসাহিত করেন। তাঁর নাতনির বিয়েতে তিনি এমন একটি নিমন্ত্রণপত্র করেছেন যাতে আমন্ত্রিতরা কার্ডটি পেয়ে একদিকে যেমন দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিবাহ রীতি সম্পর্কে জানাতে পারেন তেমন পাশাপাশি নিজেদের জাতির বিবাহ পদ্ধতি সম্পর্কেও সম্যক ধারণা মিলবে। তাছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফোন নম্বরগুলিও দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগাতে পারবেন। সন্তোষবাবুর কথায়, ‘বিয়ের কার্ডে যতই লেখা থাকুক না কেন ‘উপহার আনিবেন না’, তাও মানুষ কিছু না কিছু উপহার নিয়ে আসেন। তাই আমরা চাইছে এবং কার্ডেও তাই বলা হয়েছে সকলে খাতা নিয়ে আসুন। এই খাতাগুলি দুঃস্থ পড়ুয়াদের কাছে লাগবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.