রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: পৌষ-মাঘ মাসের কনকনে শীতে যেমন খেজুর রসের চাহিদা থাকে, তেমনই চৈত্রের প্রচণ্ড গরমে তালের রসের চাহিদা তুঙ্গে। এই গরমের শুরু থেকে তালের রস বিক্রি করে লক্ষ্মীলাভের পাশাপাশি তালের রস বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেছে এক রাজমিস্ত্রি। ১৫ দিন ধরে তাল গাছ থেকে রস নামিয়ে বিক্রি করে সংসারের খরচ খরচা করার পরও কিছু পয়সা ঘরে ঢুকতে শুরু করেছে। জানালেন, পেশায় রাজমিস্ত্রি দীপঙ্কর সরকার। বাড়ি তেহট্ট-১ ব্লকের বেতাই উত্তরজিৎপুর গ্রামে।
দীপঙ্করবাবু জানান, “গত লকডাউনের সময় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। রাজমিস্ত্রি সীমিত রোজগারে সংসার চালানোর পর সেই ঋণ শোধ করতে পারছিলাম না। দিনকে দিন ঋণের বোঝা বেড়েই যাচ্ছিল। এমন অবস্থায় নতুন করে ধার নিতে সাহস পাচ্ছিলাম না।” স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে পড়েছিলেন মহা বিপদে। দীপঙ্করবাবু জানিয়েছেন, একদিন বাড়ির দাওয়ায় বসে সাত-পাঁচ ভাবতে-ভাবতে হঠাৎ তাঁর নজর পড়ে বাড়ির সামনে কয়েকটি তাল গাছের দিকে। তখনই মনস্থির করেন তালের রস সংগ্রহের। বিকল্প পথে আয়ের দিশা খুঁজবেন।
এলাকায় তালের রসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সেই মুহূর্তে পরিচিত একজনের বাগান থেকে বাঁশ কেটে নিয়ে এসে তাল গাছ থেকে রস বানানোর প্রস্তুতি শুরু করেন । গাছ থেকে তিনদিনের মাথায় রস নামাতে সক্ষম হন দীপঙ্কর সরকার। সেই রস বিক্রির পর বুঝতে পারি রাজমিস্ত্রির হাড়ভাঙা খাটনির পর যে পারিশ্রমিক পান, তার চাইতে তালের রস বিক্রি করে দশগুণ টাকা উপার্জন হচ্ছে। প্রতি লিটার তালের রস প্রায় ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি।
দীপঙ্করাবু বলছেন, “তালগাছ থেকে রস নামানোর ব্যাপক ঝুঁকির ব্যাপার রয়েছে। প্রতিদিন সকাল-দুপুর-সন্ধে তিনবার গাছ থেকে রস নামাতে হয়। ওই সুউচ্চ তালগাছের উপর থেকে নিচে তাকালে গা শিরশির করে। তবু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংসারের সচ্ছলতা আনতে কাজটি করতে হচ্ছে।” বর্তমানে দীপঙ্করবাবু ঝুঁকি নিয়ে পাঁচটি তালগাছ কাটছেন। তাল রসের পাশাপাশি তালের গুড়েরও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে বাজারে। খেঁজুরের গুড়ের চাইতে স্বাদে-গন্ধে তালের গুড় শতগুণে ভাল।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.