অকাল মনসাপুজো মঙ্গলকোটের বাগদিপাড়ায়। রবিবার। ছবি: জয়ন্ত দাস
ধীমান রায়, কাটোয়া: গোখরো সাপ মারার পর পাড়ায় ‘অমঙ্গল’ হতে শুরু করে। মঙ্গল কামনায় ঘটা করে অকাল মনসা পুজোয় মেতে উঠলেন মঙ্গলকোটের বাগদিপাড়ার বাসিন্দারা। পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট গ্রামের বাগদিপাড়ায় মনসা মন্দিরের পাশেই পুরাতন একটি বাড়ি ভেঙে নতুন গৃহ নির্মাণের কাজের সময় একটি গোখরো সাপ দেখা গিয়েছিল। সাপটি দেখতে পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে লাঠি দিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন কয়েকজন গ্রামবাসী। কিন্তু লাঠির আঘাতে সাপটি মারা পড়ে বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, আর এই ঘটনার পর থেকেই ‘অপরাধবোধে’ ভুগতে থাকেন পাড়াপড়শিরা। দাবি, কয়েকজনকে দেবী ‘স্বপ্নাদেশ’ দিয়েছিলেন। শেষে ‘কৃতকর্মে’র জন্য প্রায়শ্চিত্ত করতে পুজোর্চ্চনা ও হোমযজ্ঞের পাশাপাশি গোখরো সাপটির দেহ সমাধিস্থ করা হল মনসা মন্দিরের ভিতরেই।
শনিবার থেকে দু’দিন ধরে অকাল মনসাপুজোয় মেতে ওঠেন মঙ্গলকোটের বাগদিপাড়ার বাসিন্দারা। জানা গিয়েছে, মঙ্গলকোটের বাগদিপাড়ায় দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস। অধিকাংশই জনমজুর ও প্রান্তিক কৃষক পরিবার। পাড়ায় রয়েছে প্রায় ৮০ বছরের পুরানো গ্রাম্যদেবী মনসার মন্দির। ওই মন্দিরের পুজারী ব্রাহ্মণ নন্দদুলাল চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “মন্দিরের পাশেই একটি পুরানো বাড়ি ভাঙা হয়েছিল। সেখানে একটি গোখরো সাপ দেখা যায়। মানুষজন ভয় পেয়েছিলেন। তারপর সাপটি মারা পড়ে। পুরানো প্রথা সাপ মারা গেলে দেহ পুড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু পোড়ানোর সময় কিছু ঘটেছিল। তারপরেই স্থানীয়রাই ওই অবস্থায় সাপটি মন্দিরে নিয়ে এসে পুজোর আয়োজন শুরু করেন। দেবীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।”
কিন্তু সেই গোখরো সাপটি মারার পর পোড়াতে গেলে কী এমন ঘটেছিল?
পাড়ার বধূ বৈশাখী মাঝি, কাজল বাগদিদের কথায়, “ওই সাপটি মরে যাওয়ার পর পোড়াতে গেলে দেখা যায় অনেকক্ষণ ধরেই দেহটি পুড়তে চায়নি। এরপর পাড়ায় বেশ কয়েকজন ‘ভর’ হতে শুরু করে। তখনই সবাই বুঝতে পারেন দেবীর প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। তাই মা মনসার কাছে ক্ষমা চেয়ে পুজোর আয়োজন করা হয়।”
জানা গিয়েছে, প্রতি বছর কার্তিক মাসের পঞ্চমী তিথিতে মঙ্গলকোটের বাগদিপাড়ার মনসা মন্দিরে বাৎসরিক পুজো হয়। কিন্তু শুক্রবার ওই বিশেষ ঘটনার পর পুজোর প্রস্তুতি শুরু করেন স্থানীয়রা। শনিবার ও রবিবার দু’দিন ধরে পুজো চলে। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পূর্ব বর্ধমান জেলার সম্পাদক আশুতোষ পাল বলেন, “আমরা এমনিতেই সাপকে মারার বিরুদ্ধে। কারণ সাপও বাস্তুতন্ত্রের অঙ্গ। এছাড়া সাপ মারা যাওয়ার পর দেহ পোড়ানোর প্রয়োজনীতাও নেই। মাটির তলায় চাপা দিয়ে দিলেই হল। সেই দিক থেকে দেহটি সমাহিত করেছেন ঠিকই আছে। তবে ভর হওয়া, পুজোর্চ্চনা করা এসব কুসংস্কার। ভয় থেকেই এসব করা হয়ে থাকে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.