সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: স্কোয়াড থেকে ৪০ লক্ষ টাকা, AK-47 রাইফেল-সহ গোলাগুলি নিয়ে উধাও মাওবাদী নেতা। গণআদালতে তাকে শাস্তি দেওয়ার ফতোয়া জারি করল সিপিআই (মাওবাদী)। সিপিআই (মাওবাদী)-র ঝাড়খণ্ড (Jharkhand) রাজ্যের দক্ষিণ জোনাল কমিটি প্রেস বিবৃতি জারি করে পলাতক মাও নেতাকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করে গণআদালতে শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। মাওবাদীদের কোনও পার্টি কমরেডকে এভাবে গণআদালতে শাস্তি দেওয়ার ফতোয়া নজিরবিহীন।
সিপিআই (মাওবাদী) দক্ষিণ জোনাল কমিটির তরফ থেকে তাদের মুখপাত্র অশোক ২২ আগস্ট হিন্দিতে লেখা বিবৃতিতে এই নির্দেশ দিয়েছে। বাংলা-ঝাড়খণ্ড পুলিশের ত্রাস এই মাওবাদী নেতার নাম মহারাজ প্রামাণিক ওরফে রাজ। তার বাড়ি ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসোওয়া জেলার ইছাগড় থানার দারুদা গ্রামে। ঝাড়খণ্ড পুলিশ মহারাজের মাথার দাম রেখেছে ১০ লক্ষ টাকা। ওই মাও নেতা ৪০ লক্ষ টাকা, একে ৪৭ ছাড়াও ১৫০ রাউন্ড গুলি, একটি নাইন এমএম পিস্তল, মোবাইল, ট্যাব, ওয়াকিটকি নিয়ে গত ১৪ আগস্ট পালিয়ে যায়l তার সঙ্গে স্কোয়াড ছেড়েছে এরিয়া কমিটির সদস্য তথা তাঁর প্রেমিকা বেলুন সর্দারও। তার বাড়ি ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা খরসোওয়া জেলার খরসোওয়া থানার রাগজমাতে। শুধু ঝাড়খণ্ডেই মহারাজের নামে ২৫টি খুন-নাশকতার মামলা রয়েছে।
একেবারে প্রান্তিক পরিবারের সন্তান মহারাজ। সেই পিছিয়ে পড়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পুলিশের চালকের চাকরি পেয়েছিল। কিন্তু ২০০৮ সাল নাগাদ চুরির জন্য তাকে দু-দু’বার জেলে যেতে হয়। তারপর ২০০৯ সালে সিপিআইয়ে (মাওবাদী) যোগ দেয়। ২০১১ সালেই তাকে এরিয়া কমিটির সদস্য করে দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে মহারাজ দক্ষিণ জোনাল কমিটির সদস্য পদ পেয়েছিল। ওই জোনাল কমিটির অধীনে ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর লাগোয়া বুন্ডু-চান্ডিল সাব জোনের ইনচার্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও দেওয়া হয় তাকে।
সিপিআইয়ের (মাওবাদী) প্রেস বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, “চলতি বছরের ২২ জুন তৃতীয়বারের জন্য স্কোয়াড ছেড়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের মাসখানেক পর ২৬ জুলাই সে আবার স্কোয়াডে ফিরে আসে। ঝাড়খণ্ড পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে সমস্ত স্কোয়াডকেই শেষ করতে চেয়েছিল। পরে পার্টির যখন সন্দেহ দানা বাঁধে তখন প্রেমিকাকে নিয়ে স্কোয়াড ছেড়ে পালিয়ে যায়। পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে পার্টি কমরেডদের হত্যা করে সংগঠনের টাকা-পয়সা, অস্ত্র, গোলা-বারুদ লুঠপাট করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল মহারাজ।”
গত ২০১৯ সালের জুন মাসে পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি থানার সুইসা ফাঁড়ির সীমানায় ঝাড়খণ্ডে যে মাও নাশকতা হয়েছিল তার মাস্টারমাইন্ড ছিল এই মহারাজ। ওই নাশকতায় সরাইকেলা-খরসোওয়া জেলার তিরুলডি থানা এলাকার কুকরুহাটে পাঁচ পুলিশকর্মীকে খতম করে অস্ত্র লুঠ করে। বাংলার সীমানায় মহারাজের এই কার্যকলাপের জন্যই সম্প্রতি সুইসা ফাঁড়ির মধ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্যাম্প করে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ (Purulia Police)।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.