দেবব্রত দাস, খাতড়া: বেশ কয়েক বছরের ব্যবধান। ফের আতঙ্ক উসকে মাওবাদী পোস্টার পড়ল বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল সারেঙ্গায়। সাদা কাগজের উপর লাল কালিতে লেখা পোস্টারে শাসকদলের নেতাদের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি বিজেপিকেও নিশানা করা হয়েছে। সোমবার সারেঙ্গা থানার ছোট সারেঙ্গা এলাকা এবং ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের দেওয়ালে সাঁটা পোস্টার ঘিরে এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। খবর পেয়ে সারেঙ্গা থানার পুলিশ গিয়ে পোস্টারগুলি উদ্ধার করেছে।
এক দশক আগে জঙ্গলমহলের এই সারেঙ্গা এলাকা ছিল মাওবাদী ও জনগণের কমিটির শক্তঘাঁটি। ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর এলাকায় শান্তি ফিরেছে। বেশ কয়েক বছর পর আচমকা নতুন করে সিপিআই(মাওবাদী) নামাঙ্কিত পোস্টারে অশনি সংকেত দেখছে পুলিশ প্রশাসন। যদিও পুলিশ আধিকারিকরা সেকথা প্রকাশ্যে মানতে নারাজ। তবে পোস্টারগুলিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও এদিন বলেন, “ বেশ কয়েকটি মাওবাদী পোস্টার উদ্ধার হয়েছে। তবে ওই পোস্টারগুলি মাওবাদীরাই লাগিয়েছে কি না, তা এখনই স্পষ্টভাবে বলা যাবে না। কে বা কারা এই পোস্টার সাঁটানোর পিছনে রয়েছে, তা তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে ছোট সারেঙ্গা এলাকায় সাদা কাগজের উপর লাল কালিতে লেখা চারটি পোস্টার উদ্ধার হয়েছে। সারেঙ্গা বিএলএলআরও অফিসের দেওয়াল থেকে ১২টি মাওবাদী পোস্টার উদ্ধার হয়েছে। কয়েকটি পোস্টারে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল নেতাদের গণ আদালতে বসিয়ে বিচার করা হবে’ বলে শাসানি দেওয়া হয়েছে। শাসকদলের পাশাপাশি পোস্টারগুলিতে বিজেপিকে সাবধান করে এনআরসি বিরোধিতা, দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি অফিসারদের চিহ্নিত করে গণ আদালতে বিচার, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার বন্ধ, কেন্দ্র–রাজ্য মিলিতভাবে চিটফান্ডে প্রতারিতদের টাকা ফেরতের দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে মাওবাদীদের তরফে জঙ্গলমহলবাসীকে ‘লাল সেলাম’ জানিয়ে তৃণমূল ও পুলিশের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার আবেদন রয়েছে পোস্টারগুলিতে।
২০০০ সালের পরবর্তী সময়ে জঙ্গলমহলে যেভাবে জনগণের কমিটির ‘গণ আন্দোলনে’ বেকার যুবক-যুবতীদের শামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হতো, সেইভাবেই এদিনের পোস্টারেও বেকার যুবক-যুবতীদের নেতাদের পিছনে না ছুটে ‘গণ আন্দোলনে’ অংশ নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। প্রতিটি পোস্টারই সাদা কাগজের উপরে লাল কালিতে লেখা ছিল। পোস্টারের নিচে বাংলা ও ইংরেজিতে সিপিআই (মাওবাদী) লেখা ছিল। বাঁকুড়ার সারেঙ্গা থানা এলাকা লালগড় ও গোয়ালতোড়ের সীমানা। পশ্চিম মেদিনীপুরের সীমানাঘেঁষা সারেঙ্গা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা ২০০৯-১০ সালে জনগণের কমিটির অবরোধ আন্দোলনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। দিনের পর দিন বনধ, রাস্তায় গাছ ফেলে অবরোধ চলেছিল এই এলাকায়। মাওবাদীদের হাতে খুন হন সিপিএমের একাধিক কর্মী থেকে সারেঙ্গা থানার আইসি রবিলোচন মিত্র-সহ পুলিশ কর্মীরা।
২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় শান্তি ফিরেছে জঙ্গলমহল এলাকায়। দীর্ঘদিন পরে জঙ্গলমহলের এই এলাকায় ফের নতুন করে মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার দেখে চিন্তার ভাঁজ পুলিশ প্রশাসন ও শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্বের কপালে। প্রশ্ন উঠছে, জঙ্গলমহলে কি আবারও সক্রিয় হচ্ছে মাওবাদীরা?
যদিও জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, “সাদা কাগজের উপর লাল কালিতে লেখা পোস্টার প্রাথমিকভাবে মাওবাদীদের হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। সারেঙ্গা থানার পুলিশকে নজরদারি বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে”। তৃণমূলের সারেঙ্গা ব্লক সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “যারা একসময় মাওবাদী ছিল, তাদের অধিকাংশই এখন মূলস্রোতে ফিরেছে। আমাদের মা-মাটি-মানুষের সরকার ওদের অধিকাংশের কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তারপরেও বিক্ষিপ্তভাবে কারা এসব পোস্টার সাঁটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে, তা পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। আমাদের ভয়ের কিছু নেই।” বিজেপির বাঁকুড়া জেলা সাংগঠনিক সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র বলেন, “আমরা অন্যায়ের বিরোধী। দুর্নীতিগ্রস্ত তো তৃণমূলের নেতারা। মাওবাদী পোস্টারে আমরা ভীত নই।”
ছবি: পরেশ মাইতি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.